Press ESC to close

আরাফার দিনের রোজা কবে রাখব? আট জিলহজ, না নয় জিলহজ?

Post Updated at 13 Jul, 2023 – 8:58 AM

প্রতি বছরই জিলহজ মাস এলে এ প্রশ্নটি নতুন করে দেখা দেয়- আরাফার রোজা আমরা কবে রাখব? আমাদের বাংলাদেশে সাধারণত সৌদি আরবের সঙ্গে একদিনের ব্যবধানে চাঁদ দেখা যায়। কখনো এ ব্যবধান দুই দিনেরও হয়ে যায়। সে হিসেবে সৌদি আরব যেদিন রোজা শুরু করে, আমরা এর পরদিন থেকে শুরু করি, যেদিন তারা ঈদ পালন করেন, আমরা এর পরের দিন করি।

হাজী সাহেবগণ জিলহজ মাসের ৯ তারিখে আরাফার মাঠে অবস্থান করেন, এ দিনটিকেই আরাফার দিন বলা হয়। হাদীসে আছে, এ দিনের রোজার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তাআলা দুই বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। কথা হলো, যেদিন হাজী সাহেবগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করেন, সেদিন সৌদি আরবে তো ৯ তারিখই হয়ে থাকে, কিন্তু আমাদের দেশে সেদিন সর্বোচ্চ আট তারিখ হতে পারে। হতে পারে সাত তারিখও। আবার যেদিন আমাদের দেশে ৯ তারিখ  সেদিন সৌদি আরবে ১০ তারিখ, ঈদের দিন। আর ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। প্রশ্ন হলো, আরাফার রোজা আমরা কবে রাখব- আমাদের দেশের হিসেবে ৯ জিলহজ, না সৌদি আরবের হিসেবে ৯ জিলহজ, যেদিন হাজী সাহেবগণ আরাফায় অবস্থান করেন এবং বাংলাদেশে সেদিন ৮ জিলহজ? জিলহজ মাস এলে প্রতি বছরই এ প্রশ্নটি উস্কে দেয়া হয়।

এ প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আগে একটি মৌলিক কথা বলে নিই- চাঁদের হিসাব প্রত্যেক দেশের অধিবাসীগণ নিজেরা চাঁদ দেখার ভিত্তিতে করবেন, না পৃথিবীর এক অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলে সারা পৃথিবীর মুসলমানগণ সে অনুসারে চাঁদের মাসের হিসাব করবেন এ মাসআলা নিয়ে যদিও কিছুটা ইখতেলাফ আছে, তবে জুমহুর তথা অধিকাংশ ইমাম ও আলেমের মত এটাই যে, প্রত্যেক দেশের অধিবাসীগণ নিজেরা চাঁদ দেখে চাঁদের মাসের হিসাব করবেন এবং এ অনুসারেই রোজা ঈদ কুরবানি আশুরা ইত্যাদি পালন করবেন। এক দেশের চাঁদ দেখা আরেক দেশের জন্যে গ্রহণযোগ্য নয়। যারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে চাঁদের হিসাব করতে চান এবং এখনকার উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার দোহাই দিয়ে থাকেন, তাদের জন্যে বলি, খোদ সৌদি আরবও নিজেদের চাঁদ দেখার ভিত্তিতেই রোজা ও ঈদ পালন করে থাকে। অন্য কোনো অঞ্চলে চাঁদ দেখা যাওয়াটাকে তারা নিজেদের জন্যে গ্রহণযোগ্য বিবেচিত করেন না। এজন্যে মাঝেমধ্যেই দেখা যায়, সৌদি আরবেরও একদিন আগে পৃথিবীর কোনো কোনো দেশে রোজা শুরু হয়ে যাচ্ছে অথবা ঈদ হয়ে যাচ্ছে। এখনকার উন্নত প্রযুক্তির যুগে বিষয়টি যাচাই করে দেখা মোটেও কঠিন কিছু নয়। তো যারা অধিকাংশ ইমাম ও আলেমের এ মতের ওপর আমল করতে চান, বিচ্ছিন্ন মতকে এড়িয়ে চলে বিচ্চিন্নতা থেকে দূরে থাকতে চান, তাদের জন্যেই আজকের এ লেখা।

আরাফার রোজা ৯ তারিখেই, আগে নয়

আরাফার দিন রোজা রাখার কথা হাদীসে এসেছে। এজন্যেই কেউ কেউ বলতে চান, যেদিন হাজী সাহেবগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করেন, সেদিনই রোজা রাখতে হবে। তারা হয়তো মনে করেন, আরাফার দিনের এ রোজার মূলে আরাফার মাঠে হাজীদের অবস্থান। এ অবস্থানকে কেন্দ্র করেই আরাফার দিনের রোজা এতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আসলে বিষয়টা এমন নয়। কারণ :

এক. আরাফার দিনের রোজা আরাফার মাঠের আমল নয়। যারা আরাফার মাঠে অবস্থান করেন, অর্থাৎ হাজী সাহেব যারা, তাদের জন্যে সেদিন রোজা রাখা সুন্নত নয়। তারা সেদিন স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়া করবেন, যেন অতিরিক্ত কোনো ক্লান্তি ও দুর্বলতা তাদের আক্রান্ত না করে এবং হজের আমলগুলো তারা ঠিকঠাক পালন করতে পারেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও আরাফার মাঠে অবস্থান কালে রোজা রাখেননি। যারা আরাফার মাঠের বাইরে থাকেন, অর্থাৎ যারা হজ করতে যাননি, এ রোজাটি তাদের জন্যেই। বোঝা গেল, আরাফার দিনের রোজার মূলে আরাফার মাঠ নয়।

দুই. আরাফার দিন একটি পরিভাষা। একটি বিশেষ দিনের নাম। জিলহজ মাসের ৯ তারিখকে ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন বলা হয়, ঠিক যেমন ১০ তারিখকে বলা হয় ইয়াওমুন নাহর বা জবাইয়ের দিন, ১১-১৩ তারিখকে বলা হয় আয়্যামুত তাশরীক বা তাশরীকের দিনসমূহ, মহররম মাসের ১০ তারিখকে বলা হয় আশুরা ইত্যাদি। আরাফার দিনও এমনই একটি পরিভাষা। যে দেশে যেদিন জিলহজ মাসের ৯ তারিখ, সে দেশে সেদিনই আরাফার দিন। আরাফার দিন মানে যেদিন হাজী সাহেবগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করেন সেদিন নয়। যে হাদীসে আরাফার দিনের রোজার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, সে হাদীসের ব্যাখ্যায় মুহাদ্দিসগণ এ ব্যাখ্যাই করেছেন- এখানে আরাফার দিন বলে ৯ জিলহজ উদ্দেশ্য।

তিন. আলেমগণ এ বিষয়ে একমত- ইয়াওমে আরাফা বা আরাফার দিন আর ইয়াওমে নাহরের মাঝে কোনো গ্যাপ নেই। আরাফার দিনের পরদিনই হলো ইয়াওমুন নাহর বা জবাইয়ের দিন। একটি ৯ তারিখ, আরেকটি ১০ তারিখ। হাদীসে যেমন ৯ তারিখের রোজাকে আরাফার দিনের রোজা বলা হয়েছে, তেমনি কুরবানির দিনকেও ইয়াওমুন নাহর বলা হয়েছে। তাই যদি আমরা আমাদের দেশে থেকে ৮ জিলহজ আরাফার দিনের রোজা পালন করি, তবে ১০ তারিখ ইয়াওমুন নাহরের আগে আরেকটি দিনের গ্যাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের ব্যাখ্যাবিরোধী।

চার. কোনো দেশে যদি সৌদি আরবের একদিন আগে চাঁদ দেখা যায়, তবে তারা যেদিন ঈদ পালন করবে, অর্থাৎ তাদের ১০ তারিখ যেদিন, সেদিন সৌদি আরবে থাকবে ৯ তারিখ এবং সেদিনই হাজী সাহেবগণ আরাফার মাঠে অবস্থান করবেন। তারা যদি নিজ দেশের হিসেবে ৯ তারিখে আরাফার রোজা না রেখে সৌদি আরবের ৯ তারিখ হিসেবে রোজা রাখতে চান, তবে তা হবে তাদের ঈদের দিন অর্থাৎ ১০ তারিখ। আর ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।

তাই আমরা যদি জুমহুর আলেমগণের মত অনুসরণ করি, নিজ নিজ দেশের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চান্দ্র মাসের হিসাব করি এবং সে হিসেবেই নিজেদের ৯ তারিখে আরাফার রোজা রাখি, তবে সেটাই হবে সঠিক পন্থা এবং এর মধ্য দিয়ে আমরা উপরের সংকটগুলো থেকেও বেরিয়ে আসতে পারব। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, আরাফার দিনের রোজার ফজিলত পেতে হলে ৯ তারিখেই রাখতে হবে, তা সৌদি আরবে যত তারিখই হোক না কেন।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মাসিক আলকাউসারে প্রকাশিত এ প্রবন্ধটি পড়ুন। প্রবন্ধের শিরোনাম : 

দুটি প্রশ্ন ও তার উত্তর : ইয়াওমে আরাফার রোযা ও কোরবানির সাথে আকীকা

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর। মাসিক আলকাউসারসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর লিখিত বইও পাঠক মহলে নন্দিত হয়েছে। তিনি মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

Comments (15)

  • রুবাইয়াsays:

    June 24, 2023 at 12:24 PM

    আসসালামু আলাইকুম রোজা কি ৩ টিকে রাখা যাবে?

    • মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:

      June 24, 2023 at 12:35 PM

      জিলহজ্ব মাসের ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত যে কোনদিন রোজা রাখতে পারেন।

  • Md morshedsays:

    June 24, 2023 at 8:56 PM

    এই বছর জিলহজ মাস নিয়ে কোন নোটিফিকেশন মুসলিম ডে তে আসেনি কেন

    • মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:

      June 24, 2023 at 11:32 PM

      অ্যাপের অ্যাডমিন হজের সফরে থাকায় কোনো নোটিফিকেশন পাঠানো সম্ভব হয় নি।

  • আহনাফ হাবিব সাকিবsays:

    June 26, 2023 at 1:03 AM

    হুজুর, ৯ তারিখে রোজা রাখা কি উত্তম হবে?

    • মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:

      June 26, 2023 at 6:43 PM

      হ্যাঁ রাখা যাবে। ৯ তারিখের রোজা তো আরাফার দিনের রোজা। হাদিসে আছে, এই রোজার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহতাআলা দুই বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।

    • মাওলানা শিব্বীর আহমদsays:

      June 27, 2023 at 5:09 AM

      আরাফার দিনের রোজার বিশেষ কোনো নিয়ত নেই। নফল রোজার নিয়ত করলেই চলবে।

  • Sabrina sanasays:

    June 27, 2023 at 4:32 AM

    আমি একজন বাংলাদেশি, বাংলাদেশ থেকে একটি প্রশ্ন করছি, আমি যদি সৌদি আরব এর ৯ই জিলহজ্ব তারিখ ধরে রোযা রাখি এবং বাংলাদেশের ৯ই জিলহজ্ব এর রোজা না রাখি তাহলে কি আরাফার দিনের সাওয়াব পাবো ?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ২,০১৯,৮৪৫

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন