Post Updated at 27 Sep, 2023 – 3:36 PM
জানাজার নামাজ ফরজে কিফায়া। অন্যান্য নামাজের বাইরে যে ফরজগুলো রয়েছে, সেগুলো জানাজার নামাজেও ফরজ। যেমন, শরীর কাপড় ও জায়গার পবিত্রতা, নিয়ত করা, কিবলামুখী হওয়া। তবে নামাজের ভেতরে কেরাত-রুকু-সিজদা জানাজার নামাজে ফরজ নয়। এখানে ফরজ দুটি- এক. চার তাকবীর বলা, দুই. দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করা। ওজর ছাড়া বসে বসে জানাজার নামাজ আদায় করলে তা সহীহ হবে না।
জানাজার নামাজের নিয়ম
জানাজার নামাজের কাজগুলো ক্রমানুসারে নিচে তুলে ধরা হলো :
১। নিয়ত করা
যে কোনো নামাজের মতো জানাজার নামাজের আগেও নিয়ত করতে হবে। মনে মনে নিয়ত করাই যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করে নিয়তের আরবি বা বাংলা বাক্য “পড়া” জরুরি নয়। মনে মনে এই ইন্টেনশন থাকাই যথেষ্ট যে জানাজার নামাজ পড়ছি।
২। প্রথম তাকবীর (তাকবীরে তাহরিমা) বলা (ফরজ)
“আল্লাহু আকবার” বলে কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে হাত বাঁধা। এই তাকবীর বলা ইমাম ও মুক্তাদি সকলের উপরই ফরজ।
৩। সানা পড়া (সুন্নাহ)
অন্যান্য নামাজের শুরুতে যে সানা পড়া হয় সেটিই এখানে পড়া যাবে। দুআ সেকশনের শুরুতে সানা এর দুআটি পাওয়া যাবে।
৪। দ্বিতীয় তাকবীর বলা (ফরজ)
সানা পড়ার পর “আল্লাহু আকবার” বলা ইমাম এবং মুক্তাদি সকলের উপরই ফরজ। এই তাকবীর বলার সময় কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে না। হাত বাঁধা অবস্থাতেই এই তাকবীর বলতে হবে।
৫। দরুদ শরীফ পড়া (সুন্নাহ)
দ্বিতীয় তাকবীরের পর দরুদ শরীফ পড়া সুন্নাহ। অন্যান্য নামাজের শেষ বৈঠকে যে দরুদে ইবরাহীম পড়া হয় এখানে সেটি পড়লেই হবে।
৬। তৃতীয় তাকবীর বলা (ফরজ)
দরুদ শরীফ পড়ার পর “আল্লাহু আকবার” বলতে হবে। এই তাকবীর বলা ইমাম এবং মুক্তাদি সকলের উপরই ফরজ। এ সময় কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে না। হাত বাঁধা অবস্থাতেই তাকবীর বলতে হবে।
৭। মৃত ব্যক্তির জন্য দুআ করা (সুন্নাহ)
তৃতীয় তাকবীরের পর মাইয়্যেতের জন্য দুআ করা সুন্নাহ। দুআগুলো এই লেখার শেষে যোগ করা আছে।
৮। চতুর্থ তাকবীর বলা (ফরজ)
মাইয়্যেতের জন্য দুআ করার পর “আল্লাহু আকবার” বলতে হবে। এই তাকবীর বলা ইমাম এবং মুক্তাদি সকলের উপরই ফরজ। এ সময় কান পর্যন্ত হাত উঠাতে হবে না। হাত বাঁধা অবস্থাতেই তাকবীর বলতে হবে।
৯। সালাম ফিরানো
চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাতে হবে। সালাম ফিরানোর মাধ্যমেই জানাজার নামাজ শেষ হবে। সালাম ফিরানোর ক্ষেত্রে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।
(ক) হাত বাঁধা অবস্থায় দুই দিকে সালাম ফিরানোর পর হাত ছাড়া।
(খ) দুই হাত ছেড়ে দিয়ে দুই দিকে সালাম ফিরানো।
(গ) ডান দিকে সালাম ফিরানোর সময় ডান হাত ছাড়া, এরপর বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময় বাম হাত ছাড়া।
উপরের তিনটি পদ্ধতির মধ্যে প্রথম দুইটি পদ্ধতি অধিকতর বিশুদ্ধ। তাই আমাদের উচিত হবে তৃতীয় পদ্ধতিতে সালাম না ফিরিয়ে প্রথম দুই পদ্ধতির কোনো একটি বেছে নেয়া। প্রথম পদ্ধতিটি অনেক আলেম এবং আমাদের কাছে বেশি গ্রহনযোগ্য মনে হয়েছে।
জানাজার নামাজের দুয়া
জানাজার নামাজে মাইয়্যেতের জন্য বেশ কিছু দুআ রয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি দুআ নিচে তুলে ধরা হলো।
প্রাপ্তবয়ষ্ক পুরুষ ও নারী উভয়ের জন্য জানাজার দুআ
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الْإِسْلاَمِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيمَانِ، اللَّهُمَّ لاَ تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ، وَلاَ تُضِلَّنَا بَعْدَهُ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমাদের জীবিত-মৃত, ছোট-বড়, পুরুষ-নারী, এবং উপস্থিত-অনুপস্থিত সকলকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ! আমাদের মধ্যে আপনি যাকে জীবিত রাখবেন তাকে ইসলামের উপর জীবিত রাখুন এবং আমাদের মধ্যে যাকে মৃত্যু দিবেন তাকে ঈমানের সাথে মৃত্যু দিন। হে আল্লাহ! এর সওয়াব থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং এরপর আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবেন না।
(আবু দাউদ ৩২০১)
নাবালক শিশুর জানার নামাজের দুআ
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطاً، وَسَلَفاً، وَأَجْراً
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমাদের জন্য তাকে অগ্রগামী প্রতিনিধি, অগ্রিম পূণ্য এবং সওয়াব হিসেবে নির্ধারণ করে দিন।
(সহীহ বুখারীর ১৩৩৫ নং হাদীসের পূর্বে এই দুআটি সনদ উল্লেখ করা ছাড়া বর্ণনা করা হয়েছে। অধ্যায়ঃ ২৩/৬৫)
নারী, পুরুষ, শিশু – সকলের জন্য একটি কমন জানাজার দুআ
উপরের দুআগুলো মুখস্থ না থাকলে নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ সকলের জানাজায় নিচের দুআটি পড়া যেতে পারে:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি মু’মিন নারী-পুরুষদের ক্ষমা করে দিন
উপরে উল্লেখিত পদ্ধতিটি হানাফী ফিকহ অনুযায়ী লিখিত। আপনি অন্য ফিকহী মাজহাবের অনুসারী হলে আপনার মাজহাবের আলেমদের থেকে জানাজার পদ্ধতি জেনে নিতে পারেন।
Leave a Reply