Press ESC to close

ওমরা আদায়ের ধারাবাহিক পদ্ধতি

Post Updated at 4 May, 2024 – 9:25 PM

ইহরাম

ইহরাম হচ্ছে ওমরার প্রথম ফরজ। নামাজ আদায়কারী যেমন তাকবীরে তাহরিমার মধ্য দিয়ে নামাজে প্রবেশ করে, একইভাবে হজ কিংবা ওমরা আদায়কারী ইহরামের মধ্য দিয়ে বরকতময় এ আমলে প্রবেশ করে। হজ কিংবা ওমরার নিয়ত করে তালবিয়া পাঠের মধ্য দিয়েই ইহরাম বাঁধা সম্পন্ন হয়।

হজ ও ওমরা আদায়ের ধারাবাহিক ও বিস্তারিত বর্ণনার লেখাগুলোকে একত্রে পিডিএফ আকারে পড়তে পারেন। PDF ডাউনলোড করতে ক্লিক করুন

ইহরামের প্রস্তুতি

ইহরামের আগে গোসল করা সুন্নত। ভালোভাবে গোসল করুন এবং শরীরে সুগন্ধি লাগিয়ে নিন, তবে কাপড়ে লাগাবেন না। গোসল করার সুযোগ না হলে ওজু করুন। এরপর ইহরামের চাদর দুটি পরুন। একটি নিচে লুঙ্গির মতো, অপরটি চাদরের মতো গায়ে জড়িয়ে নিন। আর পায়ের পাতার উপরের উঁচু অংশ যেন খোলা থাকে এমন চপ্পল বা স্যান্ডেল পরুন।

যদি নামাজের মাকরুহ ওয়াক্ত না হয় তাহলে ইহরাম বাঁধার আগে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়–ন। বাড়ি থেকে ইহরাম বেঁধে বের হতে চাইলে বাড়িতেই নামাজ আদায় করুন। আর বিমানে ইহরাম বাঁধতে চাইলে বিমানবন্দরের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষ করার পর বিমানে ওঠার আগে ইহরামের জন্যে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়–ন। এ নামাজের নির্দিষ্ট কোনো সুরা নেই। স্বাভাবিক নিয়মে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়–ন। নামাজের সময় মাথায় টুপি পরুন। মাকরুহ ওয়াক্ত হওয়ার কারণে কিংবা অন্য কোনো ওজরের কারণে যদি কেউ এ দুই রাকাত নামাজ পড়তে না পারে তবুও সমস্যা নেই। তবে ইহরামের জন্যে এ নামাজ জরুরি নয়।

ইহরামের নিয়ত

নামাজ শেষে টুপি খুলে নিন। এরপর নিয়ত করুন—হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্যে ওমরার ইচ্ছা করেছি; আপনি আমার জন্যে তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।

তালবিয়া

নিয়তের পর এভাবে তালবিয়া পড়ুন—

لَبَّيْكَ اَللّٰهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيْكَ لَكَ

(বাংলা উচ্চারণ) : লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক লা শারীকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক। লা শারীকা লাক।

অর্থ : আমি হাজির হে আল্লাহ! আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই। আমি হাজির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সকল রাজত্বও আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।

পুরুষ উচ্চস্বরে আর মহিলা অনুচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বেন।

তালবিয়া পড়ার মধ্য দিয়েই আপনার ইহরাম সম্পন্ন হয়ে যাবে এবং আপনার ওপর ইহরাম অবস্থার যাবতীয় বিধান আরোপিত হবে।

এরপর দরুদ শরীফ পড়ুন এবং এই দোয়া পড়ুন—

اَللّٰهُمَّ اِنِّـيْ اَسْاَلُكَ رِضَاكَ وَالْجَنَّةَ وَاَعُوْذُبِكَ مِنْ غَضَبِكَ وَالنَّارِ

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করছি। আপনার অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

এরপর প্রাণ খুলে দোয়া করুন। এটা দোয়া কবুলের সময়।

ইহরামের নিয়ত করার পর থেকে যত বেশি সম্ভব তালবিয়া পড়তে থাকুন। এ অবস্থায় তালবিয়াই শ্রেষ্ঠ আমল।

ইহরাম কোত্থেকে বাঁধবেন

‘মিকাতে’র বাইরে থেকে যারা ওমরা করতে যান তাদেরকে মিকাত অতিক্রম করার পূর্বে অবশ্যই ইহরাম বেঁধে নিতে হবে। আমাদের বাংলাদেশীদের জন্যে যে মিকাত, তা অতিক্রম করেই বিমান জেদ্দা বিমানবন্দরে যায়। তাই সতর্কতা হলো, ইহরাম আগেই বেঁধে নিন। কেউ চাইলে বাড়ি থেকেই ইহরাম বেঁধে বের হতে পারেন। আবার বর্তমান সময়ে যেহেতু যান্ত্রিক নানা গোলযোগের কারণে ফ্লাইট বিলম্ব হতে পারে, তাই কেউ চাইলে বিমান ছাড়ার পরও ইহরাম বাঁধতে পারেন। তবে ইহরাম পরে করলেও যদি সম্ভব হয় বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগেই ইহরামের যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে আসুন।

অবশ্য প্রথম গন্তব্য যদি মদীনা হয় তাহলে বাড়ি থেকে স্বাভাবিক কাপড়েই রওয়ানা হবেন। পরে মদীনা থেকে মক্কায় রওয়ানা হওয়ার সময় ইহরাম বাঁধতে হবে। মনে রাখতে হবে, ইহরামের কাপড় পরা মানেই ইহরাম বাঁধা নয়। ইহরামের কাপড় পরার পর নিয়ত ও তালবিয়ার মধ্য দিয়ে ইহরাম বাঁধা সম্পন্ন হয়।

ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কার্যাবলি

ইহরাম সম্পন্ন হওয়ার পর থেকেই স্বাভাবিক অবস্থায় বৈধ এমন কিছু কাজ নিষিদ্ধ হয়ে পড়ে। যেমন : সুগন্ধি লাগানো, শরীরের পশম নখ ও চুল কাটা, উকুন মারা, পুরুষের জন্যে কোনো অঙ্গের গঠন অনুযায়ী সেলাইকৃত কাপড় পরা, পায়ের পাতার উপরের হাড়টি ঢেকে যায় এমন জুতা পরা, চেহারা ও মাথা ঢাকা, শিকার করা ইত্যাদি। স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা এবং স্বামী-স্ত্রীসুলভ আচরণও এ সময়ে নিষিদ্ধ।

বিমানবন্দর থেকে মক্কা মুকাররমা

জেদ্দা বিমানবন্দরে গিয়ে যখন আপনি নামবেন, তখন সেখানকার যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সতর্কতার সঙ্গে শেষ করুন। এরপর সেখান থেকে সাধারণত বাসযোগে মক্কা মুকাররমায় নিয়ে যাওয়া হয়। যদি এতে একটু বিলম্ব হয় তবে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। সর্বাবস্থায় তালবিয়া পড়তে থাকুন। মক্কা মুকাররমায় পৌঁছে নির্ধারিত হোটেলে মালপত্র রেখে তাওয়াফের জন্যে একটু প্রস্তুতি নিন। প্রয়োজনে একটু বিশ্রাম করুন। এরপর পবিত্র অবস্থায় তাওয়াফ ও সাঈর উদ্দেশ্যে মসজিদে হারামের দিকে রওয়ানা হোন। প্রয়োজন হলে অবশ্যই ওজু করে নিন। বিনা ওজুতে তাওয়াফ করা জায়েজ নয়। একইভাবে কাপড় বা শরীরে কোনো নাপাকি থাকলে তা পবিত্র করে নিন কিংবা পরিবর্তন করুন। অবশ্য কাপড় ও শরীরে বাহ্যিক কোনো নাপাকি থাকাবস্থায় তাওয়াফ করলেও তা আদায় হয়ে যাবে, তবে মাকরুহ হবে।

মসজিদে হারামে উপস্থিতি ও তাওয়াফ

তাওয়াফ ওমরার দ্বিতীয় ও শেষ ফরজ। পবিত্র কাবাঘরের চারপাশে নির্ধারিত নিয়মে সাতবার চক্কর দিলে এক তাওয়াফ হয়। এ ঘরটিই একমাত্র ঘর, যার চারপাশে এভাবে তাওয়াফ করা যায়।

মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় অন্যান্য মসজিদের মতোই নফল ইতিকাফের নিয়ত করুন। বিসমিল্লাহ ও দরুদ শরীফ পড়ুন এবং মসজিদে প্রবেশের দোয়া পড়ুন। এভাবে পড়ুন—

بِسْمِ اللهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ ، اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِـيْ اَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

কাবা শরীফ যখন প্রথম দেখবেন তখন পড়ার একটি দোয়া আছে। সম্ভব হলে দোয়াটি পড়ুন। এরপর প্রাণখুলে দোয়া করুন। এ সময়ের দোয়া কবুল করা হয়।

মসজিদে হারামের প্রবেশের আগে এবং প্রবেশের পরও পূর্ণ ভক্তি সহকারে তালবিয়া পড়ুন। তওয়াফ শুরু করার পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়া পড়া যায়।

দোয়া শেষে আপনি ধীরে ধীরে ‘মাতাফে’ নেমে যান। বাইতুল্লাহর যে কোণায় হাজরে আসওয়াদ লাগানো আছে, সেদিক থেকেই তাওয়াফ শুরু করতে হবে। ওই বরাবর মসজিদে হারামের দেয়ালে সবুজ বাতি লাগানো আছে, যা দেখে সহজেই তাওয়াফ শুরুর স্থানটি চিহ্নিত করা যায়। আপনিও সেদিকেই অগ্রসর হোন। এবার তাওয়াফ শুরু করার পালা।

তালবিয়া বন্ধ :

ওমরার তাওয়াফ শুরু করার আগে তালবিয়া বন্ধ করে দিন।

ইযতেবা :

এ তাওয়াফের পর যেহেতু সাঈ করতে হবে, তাই এতে ‘ইযতেবা’ করা সুন্নত। ইযতেবা হলো—গায়ে জড়ানো চাদরটি ডান বগলের নিচ দিয়ে বের করে বাম কাঁধের উপর রাখা। ডান কাঁধটি তখন উন্মুক্ত থাকবে। তাওয়াফের শেষ পর্যন্ত ইহরামের চাদরটি এভাবে রাখাই সুন্নত।

নিয়ত :

তাওয়াফের শুরুতে নিয়ত করা জরুরি। তাওয়াফের নিয়ত ছাড়া এমনিতেই যদি কেউ কাবাঘরের চারপাশে ঘুরতে থাকে তাহলে এতে তাওয়াফ হবে না। আর ওমরার ফরজ তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে এভাবে নিয়ত করতে পারেন—হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে ওমরার তাওয়াফ করছি। আমার জন্যে তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।
অবশ্য শুধু তাওয়াফের নিয়ত করলেও হবে। ওমরার তাওয়াফের বিশেষ নিয়ত করা জরুরি নয়। আর নিয়ত মুখে উচ্চারণ করে করাও জরুরি নয়।

তাওয়াফ শুরু :

নিয়ত করার পর প্রথমে হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে দাঁড়ান। এরপর নামাজের তাকবিরে তাহরিমার মতো কান পর্যন্ত হাত ওঠান, যেন হাতের তালু হাজরে আসওয়াদের দিকে থাকে। অতঃপর ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদের দিকে ইশারা করে উভয় হাতের তালুতে নিঃশব্দে চুমু খান।

সম্ভব হলে এ দোয়াটি পড়ুন—

اَللّٰهُمَّ اِيْمَانًا بِكَ وَتَصْدِيْقًا بِكِتَابِكَ وَاتِّبَاعًا لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার ওপর ঈমান এনে, আপনার কিতাব বিশ্বাস করে এবং আপনার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত অনুসরণ করে (তওয়াফ করছি)।

এরপর তাওয়াফ শুরু করুন। কাবা শরীফকে বাম দিকে রেখে তাওয়াফ করতে থাকুন।

রমল :

এ তাওয়াফের পর সাঈ থাকার কারণে এর প্রথম তিন চক্করে রমল করুন। এটা সুন্নত। রমল হলো, কাঁধ হেলিয়ে-দুলিয়ে ছোট ছোট কদমে একটু দ্রুত ও বীরদর্পে হাঁটা। তবে যে তাওয়াফের পর সাঈ করতে হয় না, তাতে ইযতেবা ও রমল কোনোটিই করতে হয় না। আর অধিক ভিড়ের কারণে যদি রমল করতে কষ্ট হয় তাহলে রমল না করে স্বাভাবিকভাবেই হাঁটুন। তবে প্রথম তিন চক্করের মধ্যে যখনই ফাঁকা পাওয়া যায়, তখন রমল করুন। শেষের চার চক্কর স্বাভাবিকভাবে হাঁটুন। যে তাওয়াফের পর সাঈ নেই, সে তাওয়াফে রমলও করতে হয় না।

মনোযোগ রক্ষা করে তাওয়াফ করা :

তওয়াফের সময় খুবই ধ্যান-খেয়ালের সঙ্গে সামনের দিকে এবং নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটুন। মনোযোগের সঙ্গে দোয়া করুন। ডানে-বামে তাকাবেন না, এমনকি কাবাঘরের দিকেও নয়। অবশ্য অনিচ্ছাকৃত যদি কখনো সেদিকে সিনা ঘুরে যায় তাহলে এতে কোনো অসুবিধা নেই। তওয়াফের সময় কথা বললে যদিও তওয়াফ নষ্ট হবে না, তবে এতে তওয়াফের রুহানিয়াতও থাকে না।

তাওয়াফের দোয়া :

তাওয়াফ চলাকালীন নির্দিষ্ট কোনো দোয়া নেই। যদি সম্ভব হয় পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কোনো দোয়া পড়ুন। অথবা নিজের যে কোনো প্রয়োজনের জন্যে নিজের ভাষায় দোয়া করুন। আল্লাহ পাকের জিকির-তাসবিহ তেলাওয়াত ইত্যাদিও করতে পারেন। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকনে ইয়ামানী (অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের কোণা) ও হাজরে আসওয়াদের মাঝে এই দোয়া পড়তেন—

رَبَّنَا اٰتِنَا فِـيْ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَّفِـيْ الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّقِنَا عَذَابَ النَّارِ

অর্থ : হে প্রভু! আপনি আমাদের দুনিয়ায় কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাদেরকে দোজখের আগুন থেকে রক্ষা করুন।

রুকনে ইয়ামানিতে স্পর্শ করা :

রুকনে ইয়ামানিতে পৌঁছে যদি সম্ভব হয় তাহলে উভয় হাত কিংবা শুধু ডান হাত দিয়ে কাবাঘর স্পর্শ করা সুন্নত। তবে এখানে হাতে স্পর্শ করা সম্ভব না হলে হাত বা মাথা দিয়ে ইশারা করার কোনো নিয়ম নেই।

যখন এক চক্কর পূর্ণ হবে :

চলতে চলতে হাজরে আসওয়াদের বরাবর এলেই এক চক্কর পূর্ণ হবে। চক্কর পূর্ণ হলে আবার হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে দাঁড়ান। এবার সিনা বরাবর হাত তুলুন এবং বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে হাতের ইশারায় হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করে হাতে চুমু খান। এরপর আগের মতোই তাওয়াফ চালিয়ে যান।

সাত চক্কর শেষ হলে : এভাবে সাত চক্কর পূর্ণ হলেই তাওয়াফ শেষ হবে। সাত চক্কর শেষ হওয়ার পরও হাত তুলে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদকে হাতের ইশারায় চুমু খেতে হবে। তাওয়াফ শেষে ইযতেবাও শেষ হয়ে যাবে। এবার চাদর স্বাভাবিকভাবে পরুন। উভয় কাঁধ ঢেকে নিন।

তাওয়াফ পরবর্তী নামাজ :

তাওয়াফ শেষে দুই রাকাত নামাজ পড়া ওয়াজিব। যদি সম্ভব হয় তাহলে এ দুই রাকাত নামাজ মাকামে ইবরাহীমের পেছনে পড়া মুস্তাহাব। ভিড়ের কারণে সেখানে নামাজের সুযোগ পাওয়া না গেলে ওই বরাবর আরও পেছনে সরে গিয়েও নামাজ আদায় করতে পারেন। অথবা হারামের যে কোনো স্থানেই এ নামাজ পড়তে পারেন। নামাজের সময় যেন অবশ্যই উভয় কাঁধ ঢাকা থাকে, লক্ষ রাখুন। নামাজ শেষে দোয়া করুন। এ সময় দোয়া কবুল হয়।

জমজম পান

এরপর পেট ভরে জমজমের পানি পান করুন। শুরুতে বিসমিল্লাহ এবং শেষে আলহামদুলিল্লাহ বলতে ভুলবেন না। জমজমের পানি পান করার সময় যে দোয়া করা হয় হাদীস শরীফে তাও কবুল করার ওয়াদা রয়েছে।

এরপরের আমল—সাঈ।

সাঈ

সাফা ও মারওয়ার মাঝে সাঈ করা ওয়াজিব। এটি ওমরার প্রথম ওয়াজিব। সাফা থেকে মারওয়ায় গেলে এক চক্কর, আবার মারওয়া থেকে সাফায় এলে আরেক চক্কর, এভাবে সাত চক্কর দিতে হবে। শুরু হবে সাফা থেকে, শেষ হবে মারওয়ায়। সাঈর কতিপয় নিয়ম :

  • ওজু অবস্থায় সাঈ করা মুস্তাহাব। তবে ওজুবিহীন অবস্থাতেও যদি কেউ সাঈ করে তাহলেও আদায় হয়ে যাবে।
  • সাঈতে যাওয়ার আগে আবারও হাজরে আসওয়াদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে হাত তুলে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে হাতের ইশারায় চুমু খাওয়া সুন্নত। এজন্যে অবশ্য মাতাফে নামা জরুরি নয়। সবুজ বাতির নিকট থেকে কিংবা এ বরাবর দূর থেকেও তা করা যাবে।
  •  এরপর সাঈর নিয়ত করুন—হে আল্লাহ! আমি আপনার সন্তুষ্টির জন্যে ওমরার সাঈ আদায় করছি। আমার জন্যে আপনি তা সহজ করে দিন এবং আমার পক্ষ থেকে তা কবুল করুন।
    এবার সাফা পাহাড়ে উঠুন। পাহাড়ে উঠে প্রথমে কাবাঘরের দিকে ফিরে দাঁড়ান। সম্ভব হলে কাবাকে দেখুন। অতঃপর তিনবার আল্লাহু আকবার বলে তিনবার এই দোয়াটি পড়ুন—লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকা লাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদীর। এরপর দরুদ শরীফ পড়–ন এবং হাত তুলে প্রাণভরে দোয়া করুন। এটাও দোয়া কবুলের সময়। অবশ্য সাঈর সময় কোনো দোয়া না পড়লেও সাঈ হয়ে যাবে। তবে দোয়া ও জিকিরে মশগুল থাকাই উত্তম।
  •  দোয়া শেষে ডান দিকের রাস্তা দিয়ে মারওয়ার দিকে হাঁটতে থাকুন। স্বাভাবিক গতিতে হাঁটুন। কিছুদূর গেলে সবুজ দুই পিলার আসবে। ওই দুই পিলারের মধ্যবর্তী জায়গাটুকু মধ্যম গতিতে দৌঁড়ে অতিক্রম করা মুস্তাহাব। এরপর আবার স্বাভাবিক গতিতেই হাঁটুন।
  •  এভাবে মারওয়ায় যখন পৌঁছে যাবেন, তখনো সাফায় যে জিকির ও দোয়া পড়েছিলেন, সম্ভব হলে এখানেও তা পড়ুন। এখানেও দোয়া কবুল হয়। তাই দোয়া করুন। এরপর আবার সাফার দিকে চলতে শুরু করুন। এবারেও সবুজ দুই পিলারের মাঝে দৌঁড়ে অতিক্রম করুন। এভাবে একে একে সাত চক্কর পূর্ণ করুন। এতে সাঈ সম্পন্ন হবে। সাঈ শেষ হওয়ার পর আবারও দোয়া করুন।
  •  সাঈ শেষ করার জন্যে তাড়াহুড়ো করবেন না। ধীরেসুস্থে আদায় করুন। মনোযোগের সঙ্গে দোয়া করতে থাকুন। বিশেষত সাফা ও মারওয়ায় পৌঁছে প্রতিবারই দোয়া করার চেষ্টা করুন।

মাথা মুণ্ডানো

সাঈ শেষ করার পর পূর্ণ মাথা মুণ্ডিয়ে ইহরাম ত্যাগ করতে হবে। এটাও ওয়াজিব। তবে চুল ছোটও করা যেতে পারে। ছোট করতে চাইলে পুরো মাথার কিংবা অন্তত মাথার এক চতুর্থাংশের চুল কমপক্ষে এক ইঞ্চি পরিমাণ কাটতে হবে। আর আগে থেকেই যদি চুল এর চেয়ে ছোট থাকে তাহলে অবশ্যই মুণ্ডাতে হবে। কেউ কেউ অল্প কিছু চুল একটু একটু কেটে নেয়। এতটুকুতে ইহরাম থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। মাথা মু-াতে চাইলে পূর্ণ মাথা আর চুল ছোট করতে চাইলে কমপক্ষে মাথার এক চতুর্থাংশ পরিমাণ চুল এক ইঞ্চি পরিমাণ ছোট করতে হবে।
এর মধ্য দিয়েই ওমরার আমল শেষ হলো।

ওমরা পরবর্তী সময় কীভাবে কাটাবেন

এরপর যতদিন আপনি মক্কা মুকাররমায় অবস্থান করবেন, সময়গুলোকে যথাসম্ভব ইবাদতেই কাটানোর চেষ্টা করুন। সবরকম অনর্থক কার্যাবলি সতর্কতার সঙ্গে এড়িয়ে চলুন। যত বেশি সম্ভব তাওয়াফ করুন। তাওয়াফের সংখ্যা কম-বেশি যাই হোক না কেন, পূর্ণ মনোযোগ ও ধ্যান-খেয়ালের সঙ্গে বেশি পরিমাণ সময় তাওয়াফে কাটানোর চেষ্টা করুন। তাওয়াফই এখানকার শ্রেষ্ঠ আমল। এ নফল তাওয়াফে ইযতেবা কিংবা রমল করতে হয় না। স্বাভাবিক কাপড় পরেই তা করতে পারেন। ফরজ নামাজগুলো জামাতের সঙ্গে মসজিদে হারামেই পড়ার চেষ্টা করুন। এখানে এক রাকাত নামাজ অন্য মসজিদের এক লক্ষ রাকাত নামাজের সমান। নফল নামাজ পড়ুন। তেলাওয়াত-জিকির-আজকারসহ যে কোনো নফল ইবাদত করুন।

নিজের দুনিয়া-আখেরাতের সমৃদ্ধির জন্যে, পরিবার-পরিজন আপনজনসহ পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্যে দোয়া করুন। কাবাঘরের দিকে তাকিয়ে থাকলেও সওয়াব হয়। তাই যখনই সুযোগ হয় এ ঘরকে প্রাণভরে দেখে নিন। পরে যদি কেউ আরও নফল ওমরা করতে চান তাহলে করতে পারেন। তবে অতিরিক্ত নফল ওমরা করার তুলনায় নফল নফল তাওয়াফের ফজিলত বেশি।

মহিলাদের জন্যে কয়েকটি কথা

মহিলাদের ইহরামের জন্যে বিশেষ কোনো পোশাক পরতে হয় না। স্বাভাবিক কাপড়ই পরতে পারেন। তবে চেহারায় কাপড় লাগানো যাবে না। আবার চেহারার পর্দা করাও জরুরি। তাই এক ধরনের বিশেষ ক্যাপ পাওয়া যায়, যা ব্যবহার করলে পর্দাও রক্ষা হয়, আবার চেহারায় কাপড়ও লাগে না। তাদের তাওয়াফে ইযতেবা ও রমল নেই। স্বাভাবিক গতিতেই তারা পুরো তওয়াফ শেষ করবেন। সাঈ করার সময় দুই সবুজ পিলারের মাঝেও তারা স্বাভাবিকভাবেই হাঁটবেন। ইহরাম ত্যাগ করার সময় তারা চুলের অগ্রভাগ থেকে এক ইঞ্চি পরিমাণ কেটে নেবেন। অপবিত্র অবস্থায় তাওয়াফ করা যাবে না। এসময় বাসায় অবস্থান করতে হবে। তাওয়াফের জন্যে মসজিদে হারামে গেলে সেখানে মহিলাদের নামাজের জন্যে যে ভিন্ন জায়গা রয়েছে সেখানেই দাঁড়াতে হবে, পুরুষের কাতারে নয়। তাওয়াফের সময় অতিরিক্ত ভিড় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। পর্দার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে। অনেকে পুরো সফরেই চেহারা উন্মুক্ত রাখে। এটা জায়েজ নয়। যেখানে ইহরাম পরিহিত অবস্থাতেও চেহারা ঢেকে রাখার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে ইহরাম না থাকা অবস্থায় তো অবশ্যই পর্দা রক্ষা করতে হবে।

যারা শুরুতে মদীনা মুনাওয়ারায় যাবেন

উপরে ধারাবাহিক যে বিবরণ লেখা হয়েছে তা যারা প্রথমে মক্কা মুকাররমায় যাবেন তাদের জন্যে। আর যারা প্রথমে মদীনা মুনাওয়ারায় যাবেন তারা বাড়ি থেকে স্বাভাবিক কাপড়েই বের হবেন। ইহরামের নিয়ত করবেন না। জেদ্দা কিংবা মদীনা বিমানবন্দর থেকে তারা মদীনার বাসায় যাবেন। সেখানে অবস্থান শেষে যখন মক্কা মুকাররমার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন তখন যথানিয়মে ইহরাম বেঁধে নেবেন।

মাওলানা শিব্বীর আহমদ

উসতাযুল হাদীস, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া ঢাকা, মোহাম্মদপুর। মাসিক আলকাউসারসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। তাঁর লিখিত বইও পাঠক মহলে নন্দিত হয়েছে। তিনি মুসলিমস ডে অ্যাপের শরয়ী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

Comments (3)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ২,০১৭,৮৭৪

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন