Post Updated at 27 Mar, 2024 – 5:38 PM
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝেমধ্যে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তারাবী পড়েছেন। কত রাকাত পড়েছেন তা সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সহীহ সূত্রে জানা যায় না। তবে হযরত উমর রা. এর খেলাফতকাল থেকে এখন পর্যন্ত বিশ রাকাত তারাবী পড়া হয়ে আসছে। এ দীর্ঘ সময় কোথাও আট রাকাত পড়ার প্রচলন ছিল না। উম্মতের এ অবিচ্ছিন্ন কর্মধারাই প্রমাণ করে যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে সাহাবায়ে কেরাম বিশ রাকাতের তালিমই পেয়েছিলেন।
(তারাবীর নামায ২০ রাকাত। সাহাবীগণ ও তাবেয়ীগণ থেকে এ পর্যন্ত ২০ রাকাতের আমলই করা হচ্ছে। দলিল সহ বিস্তারিত জানতে মুসলিমস ডে ব্লগের এই লেখাটি পড়তে পারেন।)
আট রাকাত তারাবী’র সূচনা
আহলে হাদীস আলেমরাও প্রথম প্রথম বিশ রাকাত তারাবী পড়ে গেছেন। সর্বপ্রথম ১২৮৪ হিজরী সালে ভারতের আকবরাবাদ থেকে এদের একজন আট রাকাত তারাবীর ফতোয়া দেন। তীব্র প্রতিবাদের মুখে সেই ফতোয়া টিকতে পারেনি। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী নামে এদের আরেক জন ফতোয়া দেন যে, আট রাকাত তারাবী পড়া সুন্নত। বিশ রাকাত পড়া বেদাত। বলা হয়, পাঞ্জাবের অনেক স্থানে তার মাধ্যমেই আট রাকাত তারাবী’র প্রচলন শুরু হয়। তার ফতোয়ারও তীব্র বিরোধিতা হয়। এমনকি তাদেরই একজন বিখ্যাত আলেম মাওলানা গোলাম রাসূল ঐ ফতোয়ার খণ্ডনে ‘রিসালা তারাবী’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করেন। ১২৯১ সালে সেটি প্রকাশিত হয়। (দ্র. রাসায়েলে আহলে হাদীস, ২খ, ২৮ পৃ)। হাফেজ আব্দুল্লাহ গাজীপুরী ও মাওলানা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী সহ এদের আরো কিছু আলেমও একই ফতোয়া প্রচার করতে থাকেন।
আরবের অবস্থা
ভারতবর্ষের পরে এখানকার লা-মাযহাবী আলেমদের প্রভাবে আরবেও দু’একজন আটের ফতোয়া দিতে শুরু করেন। হারামাইন শরীফাইন তথা বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবী অব্যাহত থাকলেও সর্বপ্রথম আরবে শায়খ নসীব রেফায়ী একটি পুস্তিকা লিখে আট রাকাতের ফতোয়াকে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন। শায়খ নাসীরুদ্দীন আলবানীও তার সমর্থন করেন। এর খণ্ডনে আরব জাহানের কয়েকজন আলেম কলম ধরেন। একাধিক আলেমের রচনার সমষ্টি الإصابة في الانتصار للخلفاء الراشدين والصحابة নামে প্রকাশিত হয়।
সেখানে তাঁরা লিখেছেন,
ولم يشذ أحد منهم بمنعها غير هذه الشرذمة القليلة التي ظهرت في زماننا كالشيخ ناصر وإخوانه
অর্থাৎ আমাদের যুগে আত্মপ্রকাশকারী নাসিরুদ্দীন (আলবানী) ও তার সমর্থকদের ক্ষুদ্র একটি অংশ ছাড়া কেউই অনুরূপ ফতোয়া দিয়ে বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করেননি। (দ্র, পৃ, ৬১)
এ পুস্তিকাটির খণ্ডনে আলবানী সাহেব ‘তাসদীদুল ইসাবাহ’ নামে একটি পুস্তিকা রচনা করে ১৩৭৭ হি. সালে প্রকাশ করেন। কিন্তু উক্ত গ্রন্থেও তিনি সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ীগণের কোন একজনকেও দেখাতে পারেননি, যিনি আট রাকাত তারাবীর কথা বলেছেন। এমনিভাবে এমন কোন ঐতিহাসিক মসজিদের নজিরও দেখাতে পারেননি যেখানে আট রাকাত তারাবী হতো।
আলবানী সাহেবের পুস্তিকাটির যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছেন সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় দারুল ইফতার সাবেক গবেষক মুহাদ্দিস শায়খ ইসমাঈল আনসারী। তার কিতাবটির নাম- ‘তাসহীহু হাদীসি সালাতিত তারাবী ইশরীনা রাকআতান ওয়ার রাদ্দু আলাল আলবানী ফী তাযয়ীফিহী’। একইভাবে সৌদি আরবের বিখ্যাত আলেম, মসজিদে নববীর প্রসিদ্ধ মুদাররিস ও মদীনা শরীফের সাবেক কাযী শায়খ আতিয়্যা সালিম ‘আত তারাবীহ আকছারু মিন আলফি আম’ নামে একটি মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন।
সৌদির আরেকজন খ্যাতনামা আলেম, বহুগ্রন্থ প্রনেতা শায়খ মুহাম্মদ আলী সাবূনী সাহেবও এ বিষয়ে ‘আত তারাবী ইশরূনা রাকআতান’ নামে আরেকটি গ্রন্থ রচনা করেন। আর লা-মাযহাবী আলেম মোবারকপুরী সাহেবের খণ্ডনে কলম ধরেছেন বিগত শতকের সেরা মুহাদ্দিস মাওলানা হাবীবুর রহমান আজমী র. – মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, সুনানে সাঈদ ইবনে মানসূর, মুসনাদে হুমায়দী সহ বহু হাদীসগ্রন্থ সম্পাদনাপূর্বক যিনি পৃথিবীর মুখ দেখিয়েছেন এবং আরব বিশ্বের বড় বড় আলেম শায়খ মুসতাফা যারকা, শায়খ আব্দুল আযীয বিন বায, শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবূ গুদ্দাহ, নাসিরুদ্দীন আলবানী প্রমুখ যার কাছ থেকে হাদীসের ইজাযত হাসিল করেছেন। ‘রাকআতে তারাবী’ নামে উর্দূ ভাষায় তিনি অত্যন্ত সারগর্ভ ও তথ্যসমৃদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেন। এটি সর্বপ্রথম ১৩৭৬ হিজরী সালে প্রকাশিত হয়।
[সূত্র : দলিলসহ নামাযের মাসায়েল, (শিরোনাম : তারাবী বিশ রাকাত পড়া সুন্নত), লেখক : মাওলানা আবদুল মতিন, প্রকাশক : মাকতাবাতুল আযহার, ঢাকা]
পুরো বইটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন- দলিলসহ নামাযের মাসায়েল
মনির
March 13, 2024 at 6:34 pmআপনি তাহলে আয়েশা (রা) এর বর্ণিত হাদিসই পড়েননি। ২০ রাকাতের পক্ষে যুক্তি দেখালেন কিন্তু একটি দলিল পেশ করতে পারেননি। এটা কোন পর্যালোচনা হলো?একটি নফল সালাত নিয়ে ফতোয়াবাজি করা কি শরয়ী বিধান?
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
March 28, 2024 at 12:02 amআমাদের ব্লগে ‘তারাবীর নামায বিশ রাকাত’ শীর্ষক লেখাটি পড়তে পারেন। আশা করি, আপনার ভুল ধারণা দূর হবে।
হাফেজ মাওলানা আবু তাহের মুহিব্বী
March 15, 2024 at 11:48 amআলহামদুলিল্লাহ খুবই তথ্যবহুল আলোচনা করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ apps পরিচালকদের 🌹🌹🌹✅✅❤️❤️❤️
TYABA KHAN
March 15, 2024 at 5:58 pmআল্-হামদু লিল্লাহ্। অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে বিষয়টি আলোচনা করার জন্য।
যারা নিজেদের মুহাম্মদী বলে দাবি করেন তারা আট রাকাত তারাবীহ আদায় করেন। আবার হানাফী মাযহাবে বিশ রাকাত তারাবীহ সালাতের কথা বলা আছে। আমি আল্-হামদু লিল্লাহ্ বিশ রাকাতই আদায়ের চেষ্টা করি। আমার প্রশ্ন হানাফী ও মুহাম্মদী মাযহাবের মধ্যে পার্থক্য কেন যদিও আমরা সকলেই মুসলিম?
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
March 25, 2024 at 3:24 amআপনি সম্ভবত আহলে হাদীস ভাইদের কথা বলতে চেয়েছেন। তো তারা কেন আট রাকাত তারাবী আদায় করেন, এটা তারাই বলতে পারবেন। আমাদের মতে, আট রাকাত তারাবী সঠিক নয়। বরং যারা আট রাকাত তারাবীর কথা বলেন, তারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদের নামাজের হাদীসকে তারাবীর নামাজ মনে করে বিভ্রান্ত হয়েছেন কিংবা ভুল আমল করছেন।
মাওলানা আনোয়ার হুসাইন
March 16, 2024 at 4:42 amআলহামদুলিল্লাহ বহুদিন পরে তথ্য বহুল একটি প্রবন্ধ পেয়ে উপকৃত হলাম।
মিজানুর
March 16, 2024 at 5:23 pmমাশা আল্লাহ ❤️
Russell Bin Siraz
March 16, 2024 at 5:31 pmউক্ত আলোচনায়, আট রাকাত তারাবীর পক্ষে যে আয়েশা (রাঃ) থেকে সহীহ হাদিস রয়েছে সেটা তো এখানে উল্লেখ করা হয়নি,,,,।
নাকি আপনাদের স্বতন্ত্র অ্যাপ আপনাদের মর্জি মতো টপিক দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করাই একান্ত উদ্দেশ্য,,,,?
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
March 27, 2024 at 11:58 pmবিভ্রান্তি দূর করাই আমাদের লক্ষ্য। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত যে সহীহ হাদীস, সে সম্পর্কে জানার জন্য আপনি আমাদের ব্লগে প্রকাশিত ‘তারাবীর নামায বিশ রাকাত’ শীর্ষক লেখাটি পড়ুন।
মুফতী শাকের মাহমুদ
March 18, 2024 at 3:54 amআলহামদুলিল্লাহ অত্যান্ত তথ্যবহুল আলোচনা, আল্লাহ তায়ালা মুসলিম ডে পরিবারকে জাযায়ে খাইর দান করুন।
جزاكم الله احسن الجزاء
Ramiz
March 18, 2024 at 4:50 amBah mashallah
Arfana
March 18, 2024 at 8:10 pmতাহলে কি আট রাকাত পড়া যায়?
Muslims Day Desk
March 18, 2024 at 10:28 pmহযরত উমার রা. এর সময় থেকে মুসলিম বিশ্বে ২০ রাকাত তারাবীর প্রচলন ছিল। ১২০০ হিজরির পর জামাতে ৮ রাকাতের প্রচলন শুরু হয়। পোস্টটি পড়লে আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
Mohammad Jahangir Alam
March 19, 2024 at 4:47 amআলহামদুলিল্লাহ,,
২০ রাকাত পড়ে আসছি আর ২০ রাকাত পড়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
Tania Mollik
March 20, 2024 at 4:51 amআমি এই এপস ব্যবহার করে অনেক উপকার পাচ্ছি।
Leemon
March 20, 2024 at 9:29 pmএখানে কোন দলিল ভিত্তিক আলোচনায় করেননি বরং মনোউক্তি আলোচনা করেছেন। আপনি ২০ রাকাতের দলিল দেন। যদিও ৮ না ২০ নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যাথা নাই। আর কোন পক্ষই অন্যের মতকে অস্বীকার করে না।আর আপনি যে বল্লেন রাসূল(সঃ) কত রাকাত আদায় করতেন তা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। তাহলে এই হাদিস টা পড়ুন
সহিহ বুখারী হাদিস নং ২০১৩
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
March 25, 2024 at 3:08 am২০ রাকাতের দলিল নিয়ে ভিন্ন লেখা ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই আমরা প্রকাশ করব ইনশাআল্লাহ। সেখানে সহীহ বুখারীর এ হাদীস নিয়েও কথা থাকবে। এটা তারাবীর নামাজের হাদীসই নয়। এখানে তাহাজ্জুদ নামাজের কথা বলা হয়েছে। আর এ লেখাটি যেহেতু শুধুই আট রাকাত তারাবীর সূচনা নিয়েو তাই এখানে ২০ রাকাতের দলিল আলোচিত হয়নি।
Tabasum Rahaman
March 21, 2024 at 8:39 amAlhumdulillah onek kichu jante parlam
শফিকুল ইসলাম
March 22, 2024 at 5:44 pmখুব সুন্দর আলোচনা।
আমিও বিশ রাকাত সমর্থন করি।
সেখ মতিউর রহমান
March 25, 2024 at 8:45 pmসহীহ ভাবে সালাত আদায়ের পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা কোন পুস্তক থেকে নিখুঁত ভাবে জানতে পারবো (আমি ভারতের পশ্চিম বঙ্গ থেকে বলছি) দয়া করে যদি জানান।
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
April 23, 2024 at 9:20 amনামাজ সহ আরও অন্যান্য বিষয়ের মোটামুটি বিস্তারিত মাসআলা জানার জন্য মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.লিখিত বেহেশতী জেওর কিতাবটি খুবই উপকারী। পশ্চিমবঙ্গেও আশা করি কিতাবটি পাবেন।
মুহাম্মদ সুহাইল আহমাদ
March 26, 2024 at 3:52 pmমাশাল্লাহ সুন্দর আলোচনা। এই এপ টি আমি এবং আমার বন্ধুরা ব্যবহার করি। হক্কানি ওলামায়ে কেরামের পরিচালিত এপ।
তারাবীর নামায বিশ রাকাত - Muslims Day
March 27, 2024 at 3:37 am[…] রাকাত তারাবীর সূচনা সম্পর্কে জানতে এ লেখাটি পড়ুন) এর অর্থ এও নয়—হযরত উমর রা. বিশ […]
তারাবীর নামায বিশ রাকাত - Muslims Day
March 27, 2024 at 11:58 am[…] […]
মো:রফিকুল ইসলাম
March 30, 2024 at 4:33 amঅনেক আয়েশা রা: এর ৮ রাকাতের হাদিস বলেন।আয়েশা রা: এর ৮ রাকাত হলো তাহাজ্জুদ আর ২০ রাকাত হলো তারাবীহ