Post Updated at 27 May, 2024 – 8:00 AM
কুরবানি একটি ওয়াজিব আমল। যিনি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, তার ওপর কুরবানি করা ওয়াজিব। এক হাদীসের ভাষ্য অনুসারে, ঈদুল আজহার দিন বান্দা যত নেক আমল করে, তার মধ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো রক্ত প্রবাহিত করা, অর্থাৎ পশু কুরবানি করা।
কুরবানি কার ওপর ওয়াজিব, কোন পশু দিয়ে কুরবানি করা যাবে ইত্যাদি মাসআলা সম্বলিত আমাদের ব্লগের লেখাটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবার যারা হজ আদায় করেন, বিশেষত তামাত্তু ও কিরান হজ, তারাও কুরবানি করে থাকেন। আমাদের দেশ থেকে যারা হজ করতে যান, তারা সাধারণত তামাত্তু হজই করে থাকেন। আর যারা ইফরাদ হজ আদায় করেন, তাদের জন্যে কুরবানি করা ওয়াজিব নয়।
কুরবানির দিনে আদায় করা হয় বলে হজের পশু জবাইকে আমরা কুরবানি বলে থাকি। কিন্তু ফিকহের ভাষায়, এটা কুরবানি নয়, এর নাম ‘দমে শোকর’ বা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ দম। আর দম মানেই পশু জবাই করা। অর্থাৎ (তামাত্তু ও কিরান) হাজী সাহেবগণ কৃতজ্ঞতাস্বরূপ একটি পশু জবাই করবেন। এটাই দমে শোকর, যাকে সহজে আমরা কুরবানি বলে বুঝে থাকি। এ কৃতজ্ঞতা কীসের- এ প্রশ্ন হতেই পারে। এ কৃতজ্ঞতা একই সফরে হজ ও ওমরা- এ দুটি ইবাদত আদায় করার কৃতজ্ঞতা।
প্রশ্ন হলো, যারা এ দমে শোকর আদায় করবেন, তারা যদি ঈদুল আজহার কুরবানি আদায় করার সামর্থ্য রাখেন, অর্থাৎ নেসাবের মালিক হন, তবে কি তাদেরকে কুরবানি আদায় করতে হবে? না হজের কুরবানি বা দমে শোকর দিয়েই তা আদায় হয়ে যাবে?
এর উত্তরে আমরা বলব, দমে শোকর আর কুরবানি দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ইবাদত। একটি দিয়ে আরেকটি আদায় হওয়ার সুযোগ নেই। যার ওপর দুটোই ওয়াজিব, তাকে দুটি ইবাদতই ভিন্ন ভিন্ন আদায় করতে হবে। হজের কুরবানি দিয়ে ঈদুল আজহার ওয়াজিব কুরবানি আদায় হবে না।
ঈদুল আজহার কুরবানি হাজী সাহেবদের ওপর ওয়াজিব কিনা- এ বিষয়টি বোঝার জন্য কয়েকটি বিষয় লক্ষ করতে হবে। এক. হাজী সাহেব নেসাবের মালিক কিনা। নেসাবের মালিক না হলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। দুই. ঈদের দিন এবং পরবর্তী দুই দিন হাজী সাহেব মুকিম, না মুসাফির? মুসাফির হলে কুরবানি ওয়াজিব হবে না।
দ্বিতীয় বিষয়টি একটু ব্যাখ্যাসাপেক্ষ। কুরবানির দিনগুলোতে হাজী সাহেব মুকিম, না মুসাফির- এটা নির্ভর করে তার হজশিডিউলের ওপর। আমরা জানি, কোথাও সফরে গিয়ে যদি কেউ সেখানে একনাগাড়ে কমপক্ষে পনের দিন থাকার নিয়ত করে, তবে তিনি মুকিম। আর যদি পনের দিনের কম সময় থাকার নিয়ত করেন, তবে মুসাফির।
যিনি হজের পাঁচ দিন (মিনা-মুযদালিফা-আরাফার দিন)সহ হজের আগে-পরে মিলিয়ে পনের দিনের কম সময় মক্কায় অবস্থান করবেন, তিনি মুসাফির। আর যারা হজের আগে একনাগাড়ে পনের দিন মক্কায় অবস্থানের নিয়ত করবে এবং এ অবস্থাতেই মিনায় রওয়ানা করবে, তারা মুকিম। এতটুকু বিষয়ে কোনো ইখতেলাফ বা মতভিন্নতা নেই। [উল্লেখ্য, যারা কিছুদিন মক্কায় থেকে মদীনা চলে যান, এরপর সেখান থেকে আবার মক্কায় আসেন, তারা প্রথমে যে কদিন মক্কায় ছিলেন তার হিসাব পরবর্তীতে করতে হবে না। দ্বিতীয়বার মক্কায় আসার পর থেকে নতুন হিসাব শুরু হবে।]
কিন্তু যারা হজের আগে পনের দিনের কম সময় মক্কায় অবস্থান করে মিনায় রওয়ানা করবেন, পরবর্তীতে আবার কয়েকদিন মক্কায় থাকবেন, এতে হজসহ মক্কায় তার অবস্থান পনের দিন বা এর বেশি হয়ে গেল, তার বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ। আলেমদের কেউ বলেছেন, তিনি মুকিম। কারণ মিনা-মুযদালিফা-আরাফা এখন মক্কারই অংশ। তাই সবটা মিলিয়ে পনের দিন থাকার নিয়ত করলেও মুকিম হয়ে যাবে। আবার কেউ বলেছেন, এ ব্যক্তি মুসাফির। মিনায় যাওয়ার আগে যদি কেউ এক নাগাড়ে পনের দিন মক্কায় না থাকেন, তবে তিনি মুকিম হবেন না। হ্যাঁ, মিনা থেকে মক্কায় ফেরার পর যদি কেউ পনের দিন মক্কায় থাকার নিয়ত করেন, তবে তিনি সবার মতেই (হজের পর) মুকিম হয়ে যাবেন। এ দুই মতের পক্ষেই গ্রহণযোগ্য আলেমগণ রয়েছেন। এর যে কোনো মতের ওপরই আমল করা যেতে পারে। ভালো হয়, আপনি আপনার আস্থাভাজন কোনো একজন আলেমকে আপনার সফরের শিডিউল শুনিয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন- আপনি মুসাফির কিনা এবং আপনার ওপর ঈদুল আজহার কুরবানি ওয়াজিব কিনা?