Post Updated at 17 Feb, 2024 – 11:10 AM
লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে অযু ভাঙে না
লজ্জাস্থান স্পর্শ করা ওজু ভঙ্গের কারণ নয়। পুরুষ-মহিলা কারও জন্যেই নয়। হাতের যে কোনো পাশ দিয়ে স্পর্শ হোক, ওজু ভাঙ্গবে না। সাহাবী তালক ইবনে আলী রা. বর্ণনা করেন, (লজ্জাস্থান স্পর্শের পর ওজু করতে হবে কিনা এ প্রসঙ্গে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : তা তার এক টুকরো মাংসপিণ্ড ছাড়া আর কী? অথবা তা তো তারই একটি অংশ। [জামে তিরমিযী, হাদীস ৮৫] শায়েখ নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ.ও এ হাদীসকে সহীহ বলেছেন। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা.সহ অনেক সাহাবী এ মতই পোষণ করতেন। অনেক তাবেঈর মতও এমনই- লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওজু ভাঙ্গবে না। ইমাম আবু হানীফা, সুফইয়ান সাওরী, আবু ইউসুফ, মুহাম্মদ রহ.প্রমুখ এ মত পোষণ করতেন।
একটি হাদীসে অবশ্য আছে,
বুসরা বিনতে সাফওয়ান রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের লজ্জাস্থান স্পর্শ করে, সে যেন (নতুন করে) ওজু করার আগে নামাজ না পড়ে। [জামে তিরমিযী, হাদীস ৮২]
এ হাদীসের কারণে সাহাবী-তাবেয়ীনের কেউ কেউ এ মত পোষণ করতেন- লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওজু ভেঙ্গে যাবে।
যেমন, আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা., আবু হুরায়রা রা., আতা, উরওয়া, যুহরী রহ. প্রমুখ। মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমদ রহ. লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওজু ভঙ্গ হওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে এর ব্যাখ্যা নিয়ে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। যেমন, ইমাম মালিক রহ.এর প্রসিদ্ধ মত অনুসারে, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওজু ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু তার আরেকটি মত হলো, এতে ওজু ভাঙ্গবে না, বরং ওজু করা মুসতাহাব।
আবার যদি কেউ হাতের পিঠ দিয়ে লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবে ইমাম আহমাদ রহ.এর মতে ওজু ভেঙ্গে যাবে, কিন্তু ইমাম মালিক ও শাফিঈ রহ.এর মতে ওজু ভাঙ্গবে না। যদি হাতের তালুর কিনারা এবং পার্শ্ব দিয়ে স্পর্শ করে, তবে ইমাম মালিক ও আহমাদ রহ.এর মতে ওজু ভাঙ্গবে, ইমাম শাফিঈর মতে ভাঙ্গবে না। কোনো মহিলা যখন লজ্জাস্থান স্পর্শ করবে, তখন ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ রহ.এর মতে তার ওজু ভাঙ্গবে, ইমাম মালিক রহ.এর মতে ওজু ভাঙ্গবে না। ইমাম আহমাদ রহ.এর আরেকটি মত- লজ্জাস্থান কেউ স্পর্শ করলে তার জন্যে ওজু করা জরুরি নয়। কেউ চাইলে ওজু ভেঙ্গে যাওয়ার মতের ওপর আমল করতে পারে, কেউ চাইলে না ভাঙ্গার মতের ওপরও আমল করতে পারে।
সহীহ ইবনে খুযায়মা’য় বর্ণিত একটি রেওয়ায়েত থেকেও ইমাম আহমদ রহ.এর এ বক্তব্য প্রমাণিত হয়। তাকে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওজু ভাঙ্গবে কিনা- এ প্রশ্ন করলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি তা মুসতাহাব মনে করি, ওয়াজিব মনে করি না।’ [৩৩ নং হাদীসের আলোচনা]
দেখা যাচ্ছে, মুজতাহিদ যে ইমামগণ লজ্জাস্থান স্পর্শের কারণে ওজু ভঙ্গ হওয়ার কথা বলেছেন, তারা এর সঙ্গে বিভিন্ন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। কেউ বলেছেন হাতের ভেতরের দিক দিয়ে স্পর্শ করার কথা, কেউ বলেছেন, পুরুষের জন্যে এ মাসআলা, মহিলাদের জন্যে নয়। আবার ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ রহ. থেকে বিষয়টি মুসতাহাব হওয়ার মতও শক্তিশালীভাবেই বর্ণিত আছে।
এ থেকে প্রমাণিত হয়, লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওজু ভাঙ্গার বিষয়টি তাদের কারও কাছেই শর্তহীন নয়। অথচ হাদীসে বিষয়টি শর্তহীনভাবেই বর্ণিত হয়েছে। বলাবাহুল্য, পক্ষে-বিপক্ষের নানা দলিল সামনে রেখেই তারা এসব শর্তারোপ করেছেন। কিন্তু কথা হলো, যারা এ কারণে ওজু করাকে মুসতাহাব বলেছেন বলে বর্ণিত আছে, তাদের দৃষ্টিতে তা ওজু ভঙ্গ হওয়ার কারণ হিসেবে অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়। মুসতাহাব হওয়ার অর্থ হলো, ওজু করে নিলে ভালো, না করলেও অসুবিধে নেই, এতে ওজু ভাঙ্গেনি।
দ্বিতীয় কথা হলো, আমাদের হানাফী মাযহাবের মত যদিও এমন- এ কারণে ওজু ভাঙ্গবে না, কিন্তু উপরোক্ত হাদীসের কারণে হানাফী ফকীহদেরও কেউ কেউ লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওজু করাকে মুসতাহাব বলেছেন। আবার কেউ বলেছেন, এ হাদীসে ওজু করা বলে কেবলই হাত ধোয়া উদ্দেশ্য। অর্থাৎ কেউ লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে সে যেন তার হাত ধুয়ে নেয়। কেউ আবার লজ্জাস্থান স্পর্শ করা বলতে ইসতিনজার সময় পাথর, ঢিলা বা টিস্যু ব্যবহারের সময় যে স্পর্শ হয় সেটাকে বোঝাতে চেয়েছেন এবং এরপর তারা হাত ধোয়ার কথা বলেছেন।
দলিলের আলোকে যেমন আমাদের উপরোক্ত প্রথম হাদীসটি বেশি শক্তিশালী, তেমনি দুটি বাহ্যত বিপরীতমুখী হাদীসের সমন্বয় সাধনেও এখানে হানাফী মাযহাবের মতটিই বেশি শক্তিশালী, অর্থাৎ লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওজু ভাঙ্গবে না। এটি ওজু ভঙ্গ হওয়ার কোনো কারণ নয়। তবে হাত ধুয়ে নেয়া কিংবা ওজু করে নেয়া ভালো- তা ভিন্ন কথা।
[বিস্তারিত জানার জন্যে দেখুন : জামে তিরমিযীর আরবী ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘কিফায়াতুল মুগতাযী’, ১/৩৮৯-৪০৪ এবং আদদুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার]