Post Updated at 7 Apr, 2023 – 11:53 AM
সফরের কারণে রোজার সংখ্যা কমবেশি হওয়া
আমরা সকলেই জানি, পুরো পৃথিবীতে একসঙ্গে রমজান মাস শুরুও হয় না, শেষও হয় না। এর সম্পর্ক চাঁদ ওঠার সঙ্গে। যারা যখন চাঁদ দেখবে, তখন তাদের রমজান শুরু হবে। আবার চাঁদ দেখার পরই রমজান শেষ হবে।
এমন তো হতেই পারে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে সফরের কারণে কারও রোজা একটি বা দুটি কমে যেতে পারে, আবার বেড়েও যেতে পারে। যেমন, সৌদি আরবে সাধারণত বাংলাদেশের এক দিন আগে রমজান শুরু হয়। এখন কেউ যদি রমজান মাসে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যায়, তার ক্ষেত্রে রোজা একটি কমে যেতে পারে। বাংলাদেশে যেদিন ২০ রোজা, সৌদি আরবে সেদিন ২১ রোজা হতে পারে। তাই মাস শেষে দেখা যাবে, অন্যদের তুলনায় তার রোজা একটি কম রাখা হয়েছে। আবার যদি কেউ সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে আসে, তবে তার রোজা একটি বেড়ে যাবে। অর্থাৎ হতে পারে, তার রোজা ত্রিশটি পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও বাংলাদেশে ঈদের চাঁদ ওঠে নি। এ ক্ষেত্রে করণীয় কী?
এর উত্তর হলো, সফরের কারণে যদি কারও ২৭-২৮ রোজা পূর্ণ করার পরই ঈদের চাঁদ উঠে যায়, তবে সে সবার সঙ্গে ঈদ পালন করবে এবং পরবর্তী সময়ে আরো এক-দুটি রোজা তাকে রাখতে হবে। যদি সে দেশে ২৯ রোজার পর ঈদের চাঁদ ওঠে, তবে সে ২৯ রোজা পূর্ণ করবে; আর ৩০ রোজার পর ঈদের চাঁদ উঠলে ৩০ রোজা পূর্ণ করবে।
আর যদি এর বিপরীত হয়, ৩০টি পূর্ণ হওয়ার পরও সে দেশে ঈদের চাঁদ না ওঠে, তবে অন্যদের সঙ্গে সেও রোজা রাখবে, যাতে রমজানের পবিত্রতা ক্ষুণ্ন না হয়। এরপর সকলের সঙ্গে একত্রে ঈদ করবে।
ওষুধের মাধ্যমে মহিলাদের পিরিয়ড নিয়ন্ত্রণ
মহিলাদের কেউ কেউ ওষুধের মাধ্যমে পিরিয়ড বন্ধ রাখতে চান, যেন রোজাগুলো রমজান মাসেই আদায় করে নিতে পারেন। এ ব্যাপারে শরিয়তের মাসআলা হচ্ছে, যে পর্যন্ত একজন মহিলার পিরিয়ড দেখা না দেবে ওই পর্যন্ত সে নিয়মিত নামায-রোজা করে যাবে; যদিও কৃত্রিম পদ্ধতি অবলম্বন করা হোক না কেন। তবে এ ধরনের পদ্ধতি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি না সে বিষয়েও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত নেওয়া উচিত।
রমযানে ডাক্তারি পরীক্ষা
এন্ডোস্কপি
এ পরীক্ষা করার সময় লম্বা চিকন একটি পাইপ রোগীর মুখ দিয়ে পাকস্থলীতে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়; যার মাথায় বাল্বজাতীয় একটি বস্তু থাকে। নলটির অপর প্রান্ত থাকে মনিটরের সাথে। এভাবে চিকিৎসকগণ রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করে থাকেন। এ নল বা বাল্বের সঙ্গে কোনো মেডিসিন লাগানো হয় না বিধায় সাধারণভাবে এতে রোজা ভাঙ্গার কথা নয়। কিন্তু অনেক সময় টেস্টের প্রয়োজনে চিকিৎসকগণ নলের ভেতর দিয়ে পানি ছিটিয়ে থাকেন। এটা সরাসরি রোজা ভাঙ্গার কারণ।
তাই যদি কারও এন্ডোস্কপি করার সময় পানি বা কোনো ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করানো হয়, এতে রোজা ভেঙ্গে যাবে, আর পানি বা ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করানো ছাড়াই যদি তা সম্পন্ন হয়, তবে রোজা ভাঙ্গবে না।
প্রশ্ন হলো, এন্ডোস্কপি তো খালি পেটে করতে হয়। রোজা অবস্থায় যদি তা করানো না যায়, তবে ইফতারের পর রাতের বেলা তা কীভাবে করানো হবে? এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কথা হলো, এন্ডোস্কপির জন্যে রোগীর পানি খাওয়াতে কোনো বাধা নেই। তাই চাইলে শুধু পানি দিয়ে ইফতার সেরে টেস্টটি করিয়ে নিতে পারবে।
এন্ডোস্কপির মতোই মলদ্বার দিয়ে নল ঢুকিয়ে আরেকটি পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য হবে।
এনজিওগ্রাম
সাধারণ পদ্ধতির এনজিওগ্রামের কারণে রোজা নষ্ট হয় না।
ইনজেকশন, ইনসুলিন ও স্যালাইন
ইনজেকশনের কারণে রোজা ভাঙ্গে না। এমনিভাবে একজন রোজাদার ইফতারের আগেও ইনসুলিন ইনজেকশন নিতে পারে। অবশ্য যেসকল ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয় জটিল ওজর ছাড়া তা নিলে রোজা মাকরূহ হবে। যে স্যালাইন শরীরে পুশ করা হয়, সেখানেও একই কথা। এতে যেহেতু সাধারণত খাদ্যের চাহিদা মেটে, তাই জটিল ওজর ছাড়া তাতেও রোজা মাকরূহ হবে।
স্প্রে জাতীয় ওষুধ ব্যবহার
বর্তমানে এ্যারোসল জাতীয় বেশ কিছু ওষুধ দ্বারা বক্ষব্যাধি, হার্টএ্যাটাক ও অন্যান্য রোগের চিকিৎসা করানো হয়ে থাকে। গ্যাস জাতীয় এ সকল ওষুধ রোগীর মুখের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করানো হয়। নিম্নে রমযানে এ ওষুধগুলো ব্যবহারের হুকুম বর্ণনা করা হল।
নাইট্রোগ্লিসারিন
এ্যারোসোল জাতীয় ওষুধটি হার্টের রোগীরা ব্যবহার করে থাকে। জিহবার নিচে ২/৩ বার ওষুধ দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা হয়। ডাক্তারদের মতে সাথে সাথে ওই ওষুধ শিরার মাধ্যমে রক্তের সাথে মিশে যায়। এ হিসেবে এ ওষুধ ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। তবে রোগীর কর্তব্য হল, জিহবার নিচের ওষুধটি দেওয়ার পর সাথে সাথে তা গিলে না ফেলা।
ভেন্টোলিন ইনহেলার
বক্ষব্যাধির জন্য এ ওষুধ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রোগীদেরকে মুখের ভেতর এমনভাবে ওষুধটি স্প্রে করতে বলা হয়, যাতে তা সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের দিকে চলে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে খাদ্যনালী হয়ে ওষুধটি ফুসফুসে গিয়ে কাজ করে থাকে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সচিত্র ব্যাখ্যা থেকে এ কথা সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেছে, ওষুধটি স্প্রে করার পর এর কিছু অংশ খাদ্যনালীতেও প্রবেশ করে। সুতরাং এ ধরনের ইনহেলার প্রয়োগের কারণে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে।
চিকিৎসকগণ বলেছেন যে, মারাত্মক জটিল রোগী ছাড়া অন্য সকলেরই সাহরীতে এক ডোজ ইনহেলার নেওয়ার পর পরবর্তী ডোজ ইফতার পর্যন্ত বিলম্ব করার সুযোগ রয়েছে। সুতরাং রোগীর কর্তব্য হল বিষয়টি তার চিকিৎসক থেকে বুঝে নেওয়া এবং সম্ভব হলে রোজা অবস্থায় তা ব্যবহার না করা।
অবশ্য যদি কোনো রোগীর অবস্থা এত জটিল হয় যে, ডাক্তার তাকে অবশ্যই দিনেও ওষুধটি ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ওই রোগীর এ সময়ে ইনহেলার ব্যবহার করার অবকাশ রয়েছে। পরবর্তী সময়ে রোজা কাযা করে নিবে।
সূত্র : মাসিক আলকাউসার রোযা ও যাকাত : প্রচলিত কয়েকটি মাসআলা – মাসিক আলকাউসার (alkawsar.com)
Mutalib
March 24, 2023 at 5:38 pmজাযাকাল্লাহু খাইরান
Shakhawat Hussain Bhuiyan
March 28, 2023 at 6:49 pmShukran for giving such a wonderful solution. May Allah SWT bless upon you.
Siam
March 7, 2024 at 8:25 amMasshallah