Post Updated at 27 May, 2024 – 7:57 AM
একটি পশুতে কতজন শরিক হতে পারে
উট গরু মহিষে সর্বোচ্চ সাতজন মিলে কুরবানি করতে পারে। এর কম হলেও কোনো সমস্যা নেই। শরিকের সংখ্যা বেজোড় হওয়া জরুরি নয়। অনেকে মনে করে, শরিক-সংখ্যা সাত পূর্ণ করতে হবে কিংবা বেজোড় হতে হবে। কোনোটাই জরুরি নয়।
ছাগল ভেড়া ও দুম্বার একটি দিয়ে একজনই কুরবানি করতে পারবে। উট গরু মহিষে যদি সাত শরিকের বেশি হয় কিংবা ছাগল ভেড়া ও দুম্বায় একাধিক শরিক থাকে, তাহলে কারও কুরবানিই হবে না। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮০৭-৮; ফাতাওয়া আলমগীরী, ৫/২৯৭]
শরিকদের অংশ সমান হওয়াও জরুরি নয়। তবে প্রত্যেক শরিককেই কমপক্ষে সাত ভাগের এক ভাগের শরিক হতে হবে। যেমন, পাঁচজন মিলে সমান হারে একটি গরু কুরবানি করল, কিংবা একজন সাত ভাগের এক ভাগ, একজন সাত ভাগের দুই ভাগ, একজন সাত ভাগের চার ভাগ, এভাবে মোট সাত ভাগ, অথবা দুইজন সাত ভাগের এক ভাগ করে মোট দুই ভাগ, আর অবশিষ্ট পাঁচ ভাগ আরও দুই জন ভাগ করে নিল, প্রত্যেকে আড়াই ভাগ করে- এ সবই জায়েয।
একটি গরুর মূল্য যদি ৭০০০০ টাকা হয়, তাহলে এ গরুতে যারা শরিক হবে, প্রত্যেককেই কমপক্ষে ১০০০০ টাকা দিয়ে শরিক হতে হবে। কেউ ১০০০০, কেউ ১৫০০০, কেউ ২০০০০- এভাবে ৪/৫ জন মিলে যদি এ গরুতে শরিক হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। তবে কেউ এ গরুতে ১০০০০ টাকার কমে শরিক হতে পারবে না। উল্লেখ্য, টাকার পরিমাণ কম-বেশি হলে টাকা অনুপাতেই গোশত বণ্টন করা হবে।
আকিকার নিয়তে কুরবানির পশুতে শরিক হওয়া
উট গরু মহিষে কেউ আকিকার নিয়তেও শরিক হতে পারে। এতে কুরবানি ও আকিকা দুটিই সহীহ হয়ে যাবে। তবে কেউ কেউ নিজের ওপর কুরবানি ওয়াজিব হওয়া সত্ত্বেও কুরবানি না দিয়ে কেবল আকিকা দিয়ে থাকে। এমনটা করা যাবে না। আকিকা করা সুন্নত। আর কুরবানি করা ওয়াজিব। যদি ওয়াজিব কুরবানি ও সুন্নত আকিকা- দুটোই একসঙ্গে আদায় করা যায়, তাহলে তা করবে। আর যদি একটা করতে হয় তাহলে নিজের (ওয়াজিব) কুরবানি আদায় করবে, সন্তানের আকিকা পরবর্তীতে সুযোগ হলে করবে। হ্যাঁ, যদি সে ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব না হয়ে থাকে, তাহলে ভিন্ন কথা।
কুরবানি ও আকিকা—দুটোই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আদায় করা হয়। দুটি একই ধরনের ইবাদত। হাদীসে কুরবানি ও আকিকার জন্যে যেমন ভিন্ন ভিন্ন শব্দ এসেছে, আবার দুটির জন্যে অভিন্ন শব্দও এসেছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে বলেছেন :
من ولد له منكم ولد ، فأحب أن ينسك عنه فليفعل
অর্থাৎ তোমাদের কারও যখন সন্তান হয়, এরপর সে তার পক্ষ থেকে ‘নুসুক’ আদায় করতে চায়, সে যেন তা করে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ২৪৭২২]
এখানে নুসুক মানে আকিকা, আর এ শব্দটি কুরবানি অর্থে বহুল ব্যবহৃত। দুটি যেহেতু একই ধরনের ইবাদত, তাই দুটি একই পশুতে একত্রিত হওয়াতেও কোনো অসুবিধা নেই।
এ বিষয়ে বিখ্যাত তিনজন তাবেঈর বক্তব্যও সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাবেঈ মুহাম্মদ ইবনে সীরীন, হাসান বসরী ও কাতাদা রাহিমাহুমুল্লাহ—তাদের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, যার জন্যে আকিকা করা হয়নি, তার জন্যে কুরবানি করা হলেই তা আকিকা হিসেবে যথেষ্ট হয়ে যাবে। উপরোক্ত মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বার ২৪৭৫০ ও ২৪৭৫১ নং হাদীসে হাসান বসরী ও মুহাম্মদ ইবনে সীরীন রহ.এর এবং মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকের ৭৯৬৭ নং হাদীসে কাতাদা রহ.এর বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে। তাদের এ বক্তব্য থেকেও বোঝা যায়, কুরবানি ও আকিকা মৌলিকভাবে অভিন্ন ইবাদত, যদিও দুটির উপলক্ষ ভিন্ন ভিন্ন।
যারা বলে থাকেন, একই পশুতে কুরবানি ও আকিকা একত্রিত করা যাবে না, তারা কেউ কেউ এভাবে বলে থাকেন—কুরবানি তো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে করা হয়, আর আকিকা করা হয় সন্তানের জন্য। দুটোর উদ্দেশ্যই যেহেতু ভিন্ন, তাই দুটোকে একত্রিত করা যাবে না। বলাবাহুল্য, এ কথাটি নিতান্তই ভিত্তিহীন। কুরবানি যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়, আকিকাও আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্যই করা হয়।
যে শরিক অন্যদের কুরবানি নষ্ট করে দেয়
শরিকদের কারও টাকা যদি হারাম হয়, কিংবা কোনো শরিক যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের নিয়ত না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানি করে, তাহলে কারও কুরবানিই সহীহ হবে না। তাই কুরবানির পশুতে শরিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা কাম্য। হারাম উপার্জনকারী কেউ যেন নিজেদের কুরবানিতে শরিক না হয়।
গোশত বণ্টন পদ্ধতি
শরিকে কুরবানি করলে গোশত ওজন করে সমান হারে বণ্টন করতে হবে। অনেকে অনুমান করে গোশত বণ্টন করে। অনুমান করে কুরবানির গোশত বণ্টন করা জায়েজ নয়। কেউ কেউ আবার ওজন করে গোশত বণ্টন করাকে সংকীর্ণতা বা গোড়ামি মনে করে থাকে। অথচ এটাই শরিয়তের বিধান। তাই এ ধরনের মন্তব্য থেকে বেঁচে থাকা জরুরি।
পশু কেনার পর শরিক গ্রহণ করা
শরিকে কুরবানি করতে চাইলে পশু কেনার আগেই শরিক নির্ধারণ করে নেয়া উচিত। এটা যদি কেউ করতে না পারে, তবে সে কমপক্ষে এতটুকু নিয়ত করবে- এ পশুতে সে অন্য শরিক গ্রহণ করবে। এ নিয়তে পশু কেনার পর কাউকে শরিক গ্রহণ করলে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু একা একটি পশু কুরবানি করার নিয়তে কেনার পর তাতে আরও শরিক নেয়া যাবে কিনা- এ ক্ষেত্রে কথা হলো : যদি সে ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে থাকে, তবে সে অন্যকে শরিক হিসেবে নিতে পারবে। তবে তা না করাই উত্তম এবং শরিক নিলে শরিকের অংশ পরিমাণ মূল্য সদকা করে দেয়া উত্তম।
আর যদি সে ব্যক্তির ওপর কুরবানি ওয়াজিব না হয়ে থাকে, তাহলে সে একা কুরবানি দেয়ার নিয়তে পশু কেনার পর তাতে আর কাউকে শরিক হিসেবে নিতে পারবে না। যদি নেয়, তাহলে শরিকের অংশ পরিমাণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে।
কুরবানির আগেই কোনো শরিকের মৃত্যু হলে
কয়েকজন মিলে একটি কুরবানির পশু কিনল। এরপর কুরবানির আগেই একজন শরীকের মৃত্যু হলো। এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশরা যদি তার পক্ষ থেকে কুরবানির অনুমতি দেয়, তাহলে তা জায়েয হবে। অন্যথায় তার টাকা ফেরত দিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে তার জায়গায় অন্য কাউকে শরিক নেয়া যাবে।
Mozibur Rahman
June 10, 2024 at 4:56 pmWhat’s the rules to include Hazrat Mohammad sm name.
Muslims Day Desk
June 11, 2024 at 10:21 amPlease check here.
তাহমিদ
June 15, 2024 at 4:18 pmসাতজন টাকা দিয়ে পশু ক্রয় করে সাতজনই কোরবানির নিয়ত করে কোরবানি করতে পারবে? নাকি সাতজন টাকা দিয়ে একজনকে টাকার মালিক বানাবে, তারপর সেই একজনই কোরবানি করবে বাকি ছয়জনের পক্ষ থেকে?
Muslims Day Desk
June 15, 2024 at 9:10 pmগরু-মহিষ-উটে সাতজন শরীক আলাদা আলাদা ভাবে কুরবানির নিয়ত করতে পারবে। একজনকে মালিক বানিয়ে দেয়া জরুরি নয়। কিন্তু ছাগল-ভেড়ায় একাধিক ব্যক্তি কুরবানির নিয়ত করতে পারবে না। যদি এমন হয় ২-৩ ভাই বা পরিচিত ব্যক্তি মিলে একটা ছাগল কুরবানি দিতে চাচ্ছে। সেক্ষেত্রে তাদের সকলের টাকা একজনকে দিয়ে তাকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। তখন সেই একজন ব্যক্তি তার নিজের পক্ষ থেকে কুরবানি করবে।
তাহমিদ
June 17, 2024 at 5:49 amجَزَاكَ ٱللَّٰهُ خَيْرًا