Post Updated at 29 Feb, 2024 – 10:11 PM
মাসআলা : ওজুতে টাখনুসহ দুই পা ধোয়া ফরজ। তবে যদি কারও পায়ে চামড়ার মোজা পরিহিত থাকে তাহলে শর্তসাপেক্ষে মোজা না খুলে মোজার ওপর মাসেহ করারও সুযোগ আছে। [সহীহ বুখারী, ২০২]
কোন মোজার ওপর মাসেহ করা যায়?
মাসআলা : মাসেহ করার জন্য মোজার মধ্যে নিম্নলিখিত শর্তগুলো থাকতে হবে :
এক. মোজা এতটুকু বড় হতে হবে, যা দিয়ে টাখনু ঢাকা যায়।
দুই. মোজা এমন মোটা ও পুরু হতে হবে যে, জুতা ছাড়া শুধু মোজা পায়ে দিয়ে তিন মাইল পর্যন্ত হাঁটা যায়। এতে মোজা ফেটে যায় না এবং নষ্টও হয় না।
তিন. পায়ের সাথে কোনো জিনিস দ্বারা বাঁধা ছাড়াই তা লেগে থাকে এবং তা পরিধান করে হাঁটা যায়।
চার. মোজা এমন মোটা হতে হবে যে, তা পানি চোষে না এবং তা ভেদ করে পানি পা পর্যন্ত পৌঁছে না।
পাঁচ. তা পরিধান করার পর মোজার উপর থেকে ভিতরের অংশ দেখা যায় না।
এই শর্তগুলো সাধারণত চামড়ার মোজাতেই পাওয়া যায়। সচরাচর ব্যবহৃত সুতা বা পশমের মোজায় যেহেতু এসব শর্ত পাওয়া যায় না, তাই সেগুলোর উপর মাসেহ জায়েয হবে না।
মোজা কখন পরবে?
মাসআলা : পূর্ণ ওজু করার পর মোজা পরতে হবে। যদি কেউ প্রথমে পা ধুয়ে মোজা পরে নেয়, এরপর ওজু ভেঙ্গে যায় এমন কোনো কারণ ঘটার পূর্বেই বাকি ওজু পূর্ণ করে তাহলেও চলবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস ২০৬]
মাসেহ করার পদ্ধতি
মাসআলা : হাতের আঙ্গুলগুলো প্রথমে ভিজিয়ে নেবে। এরপর ডান হাতের আঙ্গুল ডান পায়ের আঙ্গুলের মাথার উপর এবং বাম হাতের আঙ্গুল বাম পায়ের আঙ্গুলের মাথার দিক থেকে বিছিয়ে দিতে হবে, এরপর পেছনের দিকে পায়ের গোছা পর্যন্ত টেনে আনবে। হাতের আঙ্গুলগুলোর মাঝে সামান্য ফাঁক থাকবে। পায়ের পাতার উপরের দিক মাসেহ না করে কেউ যদি নিচে মাসেহ করে তাহলে মাসেহ শুদ্ধ হবে না। [ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩৩; বাদায়েউস সানায়ে ১/৮৭; আলমুহীতুল বুরহানী ১/৩৪০; আলবাহরুর রায়েক ১/১৭৩; শরহুল মুনইয়া ১০৯; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৭২]
মাসেহ কতক্ষণ করতে পারবে?
মাসআলা : মুকিম ব্যক্তির জন্যে মাসেহের সময়সীমা ১ দিন (২৪ ঘণ্টা) আর মুসাফিরের জন্যে ৩ দিন (৭২ ঘণ্টা)। একবার মোজা পরার পর যখন প্রথমবার ওজু ভেঙ্গে যাবে তখন থেকে এ সময়সীমা শুরু হবে। (নিজের এলাকা থেকে কমপক্ষে ৪৮ মাইল বা ৭৭.৩ কিলোমিটার দূরে কোথাও সফরের উদ্দেশ্যে বের হবে, সে মুসাফির। কোথাও সফরে গিয়ে যদি কেউ একনাগাড়ে ১৫ দিন থাকার নিয়ত না করে, তবে ওখানেও সে মুসাফির। নিজ এলাকায় কিংবা ৪৮ মাইলের কম দূরত্বের সফরে অথবা সফরের দূরত্বের কোথাও যাওয়ার পর সেখানে ১৫ দিন থাকার নিয়ত করলে সে মুকিম।)
মুকিম অবস্থায় মোজা পরার পর যদি কেউ সফর শুরু করে
মাসআলা : মুকিম অবস্থায় মোজার উপর মাসেহ করার সময়সীমা ১ দিন আর মুসাফির ব্যক্তির জন্যে এ সময়সীমা ৩ দিন। তবে যদি কেউ মুকিম অবস্থায় মোজা পরে, এরপর মুকিম ব্যক্তির জন্যে মাসেহের নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পূর্বেই সফর শুরু করে, তবে সেও ৩ দিন পর্যন্ত মোজার ওপর মাসেহ করার সুযোগ পাবে। [ফাতহুল কাদীর, ১/১৩৬; আদদুররুল মুখতার, ১/২৭৮]
যে কারণে মোজার উপর মাসেহ বাতিল হয়ে যায়
- যেসব কারণে ওজু ভেঙ্গে যায়, সেসব কারণে মাসেহও ভেঙ্গে যায়।
- মাসেহের নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে গেলে, অর্থাৎ ওজু করে মোজা পরার পর যখন তার ওজু ভেঙ্গে যাবে, তখন থেকে এক দিন আর মুসাফিরের জন্যে তিন দিন অতিবাহিত হলে মাসেহ ভেঙ্গে যায়।
- উভয় মোজা অথবা কোনো একটি মোজা খুলে ফেললে মাসেহ বাতিল হয়ে যায়।
- মোজার উপর মাসেহ করার পর যদি মোজার ভেতর পানি ঢুকে সম্পূর্ণ পা অথবা অর্ধেকের বেশি অংশ ভিজে যায়, তাহলেও মাসেহ বাতিল হয়ে যাবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/৩৪-৩৫]
মাসেহ বাতিল হয়ে গেলে করণীয়
মাসআলা : উপরোক্ত প্রথম ক্ষেত্রে তো নতুন করে ওজু করার সময় মোজার উপর মাসেহ করে নিলেই চলবে। আর বাকি ক্ষেত্রগুলোতে উভয় মোজা খুলে উভয় পা ধুয়ে নিতে হবে। তখন যদি ওজু থাকে, তাহলে শুধু পা ধোয়ার মাধ্যমেই ওজু আবার পূর্ণ হয়ে যাবে। অবশ্য তখন নতুন করে পূর্ণ ওজু করে নেয়াই উত্তম।
মোজার উপর মাসেহ করার আরও কয়েকটি মাসআলা
মাসআলা : সাধারণ কাপড়ের বা সুতার মোজার উপর মাসেহ করা জায়েজ নয়।
মাসআলা : হাতমোজা, বোরকা, হিজাবের উপর দিয়ে মাসেহ করা জায়েজ নয়। একই ভাবে টুপি-পাগড়ির উপর দিয়েও মাথা মাসেহ করলে ওজু শুদ্ধ হবে না।
মাসআলা : শুধু ওজুর সময়ই পা ধোয়ার পরিবর্তে শর্তসাপেক্ষে মাসেহ করা যায়। যদি কারও গোসল ফরজ হয় তাহলে পা ধোয়া আবশ্যক। তখন মাসেহ করলে হবে না।