Post Updated at 9 Aug, 2024 – 12:01 PM
মুমিনের বিজয় উদযাপন কেমন হবে—পবিত্র কুরআনের সূরা নাসর-এ এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। পুরো সূরাটিই পড়ুন—
اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللّٰهِ وَ الْفَتْحُۙ ۱ وَ رَاَیْتَ النَّاسَ یَدْخُلُوْنَ فِیْ دِیْنِ اللّٰهِ اَفْوَاجًاۙ ۲ فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَ اسْتَغْفِرْهُ ؔؕ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا۠ ۳
অর্থ : যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, আর তুমি মানুষকে দেখবে—আল্লাহর দীনে তারা দলে দলে প্রবেশ করছে, তখন তুমি তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি তওবাকবুলকারী।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এখানে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে—বিজয় যখন আসবে, তখন আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাসবীহ পাঠ করতে এবং তাঁর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে। তিনি যে বিজয় দান করেছেন, সে জন্যে প্রশংসা করার কথা বলা হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গে তাসবীহ পাঠ করা ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা। আল্লাহ তাআলার প্রশংসা, তাসবীহ পাঠ ও ক্ষমাপ্রার্থনা অবশ্য মুমিনের বিজয়ের সঙ্গেই সম্পৃক্ত নয়। যে কোনো নেয়ামতই সে লাভ করুক, সে পরম করুণাময় আল্লাহর প্রশংসায় নিজের মাথা নুইয়ে দেবে।
জীবনের যত প্রাপ্তি, সবকিছুকে মুমিন কেবলই আল্লাহ তাআলার দান বলে বিশ্বাস করে। পার্থিব কিছু উপকরণ হয়তো সামনে থাকে, পরীক্ষায় ভালো ফলের পেছনে মেধা সাধনা ইত্যাদি কাজ করতে পারে, কিন্তু এগুলো কেবলই বাহ্যিক উপকরণ। মুমিনের বিশ্বাস—তার সকল সফলতার পেছনে আল্লাহ তাআলার দয়াই মূল। আল্লাহ যদি দয়া না করেন, তাহলে আমাদের সকল আসবাব-উপকরণ ব্যর্থ হতে বাধ্য। তাই যে কোনো প্রাপ্তিতে আমাদের প্রথম কর্তব্য—আল্লাহ তাআলার দরবারে কৃতজ্ঞতা ও প্রশংসায় নতশির হওয়া।
প্রতি মুহূর্তেই আমরা কত শত নেয়ামত ভোগ করছি! সে নেয়ামতের জন্যে উচিত সর্বক্ষণ আল্লাহ তাআলার বন্দেগিতেই ডুবে থাকা। আর যখন কোনো বিশেষ নেয়ামত আমরা পাই, তখন তো এর তাগিদ আরও অনেক বেড়ে যায়। মুমিনের বিজয় উদযাপন এমনই হতে হবে।
বিজয় আল্লাহ তাআলারই নেয়ামত—এ উপলব্ধি যখন থাকবে, তখন একদিকে মন অবচেতনভাবেই কৃতজ্ঞ হয়ে উঠবে, এর পাশাপাশি বিনয়ও তাকে জড়িয়ে ধরবেই। বিজয়ী কেউ যখন আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞ হয়, তখন সে বিনয়কে উপেক্ষা করতে পারে না। তার তো স্থির বিশ্বাস—এ বিজয় আমাদের চেষ্টা ও সাধনার ফল নয়, এটা কেবলই আল্লাহর দয়া, আমাদের চেষ্টা ও সাধনা সেখানে কেবলই একটি বাহ্যিক উপকরণ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয় করেন, তখন তিনি এমন সংকুচিত হয়ে মক্কায় প্রবেশ করছিলেন, যেন তাঁর মাথা উটের পিঠে লেগে যাচ্ছিল। এতটাই বিনীত ছিলেন তিনি! আর বিজয়ী সেনাপতি হিসেবে মক্কায় প্রবেশের পর তিনি যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন, সে ইতিহাস তো কারও অজানা নয়। সে নবীর উম্মত হিসেবে বিজয়ের আনন্দঘন মুহূর্তেও আমরা উপেক্ষা কিংবা ভুলে যেতে পারি না প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয় সুন্নাহ ও আদর্শের কথা।
মক্কা বিজয়েরই আরেকটি ঘটনা। আবু জেহেলের ছেলে ইকরিমা তখনো মুসলমান হননি। তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। তার স্ত্রী ইসলাম গ্রহণ করে স্বামীর জন্যে নিরাপত্তা প্রার্থনা করেন।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে প্রার্থনা মঞ্জুর করে তাকে নিয়ে আসতে বলেন। এরপর নবীজি উপস্থিত সাহাবীদের বলে দিয়েছিলেন :
يَأْتِيَكُمْ عِكْرِمَةُ بْنُ أَبِي جَهْلٍ مُؤْمِنًا مُهَاجِرًا ، فَلاَ تَسُبُّوا أَبَاهُ ، فَإِنَّ سَبَّ الْمَيِّتِ يُؤْذِي الْحَيَّ ، وَلاَ يَبْلُغُ الْمَيِّتَ
অর্থ : আবু জেহেলের ছেলে ইকরিমা মুমিন মুহাজির হয়ে তোমাদের কাছে আসছে। তাই তোমরা তার বাবাকে গালি দিও না। কেননা মৃতদের গালি দিলে জীবিতরা কষ্ট পায়, মৃতদের কিছুই হয় না। [আলমুসতাদরাক, হাদীস ৫০৫৫]
এই তো নবীজির আচরণ। যে আবু জেহেলের হত্যাকান্ডের পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন—এ হচ্ছে এ উম্মতের ফেরাউন, তার ছেলেই যখন ইসলাম গ্রহণের জন্যে আসছে, তখন তাকেও যেন সমালোচনা করা না হয়, গালি দেয়া না হয়, নবীজি সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। কেননা আবু জেহেলকে তার ছেলের সামনে গালি দিলে তাতে তার ছেলেই কষ্ট পাবে, আবু জেহেল নয়।
প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এসব ঘটনা এবং ইসলামের ব্যাপক নির্দেশনার আলোকে আমরা বলতে পারি, বিজয়ের আনন্দঘন মুহূর্তে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে—
- আমরা যেন আল্লাহ তাআলার নেয়ামতের শোকর ও কৃতজ্ঞতা আদায় করতে ভুলে না যাই।
- নেয়ামতকে যেন আমরা অন্যায়ভাবে ভোগ করতে শুরু না করি।
- যতটা সম্ভব প্রতিশোধপরায়নতা থেকে বের হয়ে ক্ষমা ও উদারতা যেন চর্চা করি।
- অন্যায় যেখানে ব্যক্তিবিশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়, জাতীয় কিংবা ব্যাপক, সেখানে বিচারের ভার নিজের কাঁধে তুলে না নিয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছেই যেন বিচার দায়ের করি।
- লুটপাট তো সবসময়ই অন্যায়। রাষ্ট্রীয় সম্পদ যে অন্যায়ভাবে ভোগ করে, রাষ্ট্রের কোনো নাগরিক চাইলেই তার ওপর আক্রমণ করে কিংবা অন্য কোনোভাবে কিছু সম্পদ ছিনিয়ে নিতে পারে না। এগুলোও লুটপাট এবং হারাম।
- বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা, জ্বালিয়ে দেয়া, ভাঙচুর করা, লুটপাট করা তো সর্বাবস্থায়ই নিষিদ্ধ। রাষ্ট্রীয় সম্পদ কোনো বিশেষ ব্যক্তির নয়, ক্ষমতাসীনের নয়, বরং জনগণের টাকায় সেগুলো গড়ে তোলা হয়। তাই এসবে হামলা চালানো, লুটপাট ইত্যাদি নির্ঘাত অন্যায় ও হারাম।
- প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে প্রতিপক্ষের বাড়িঘর সহায়সম্পদে হামলা চালানোও অন্যায়। যদি সে সম্পদ অবৈধভাবে অর্জিত হয়ে থাকে, তাহলে রাষ্ট্র প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, প্রয়োজনে সম্পদ ক্রোক করবে। কিন্তু আইন জনগণের নিজের হাতে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই।
- বিজিত জালেম প্রতিপক্ষ যখন কোনো দল বা গোষ্ঠী হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই এমন হতে পারে—অপরাধের পরিমাণ সবার সমান নয়, এমনকি সকলে হয়তো অপরাধের সঙ্গে জড়িতও নয়। তাই জালেমের বিরুদ্ধে বিজয়ের উল্লাসে আমরা যেন আবার ন্যায়-ইনসাফের কথা ভুলে গিয়ে নিজেরা জুলুমে জড়িয়ে না পড়ি। নিরপরাধ ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া যেমন অন্যায়, লঘু অপরাধে গুরু শাস্তিও অন্যায়। তাই সর্বাবস্থায় বিচারের ভার উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের হাতে ন্যস্ত করাই বিবেক ও বুদ্ধির কাজ।
- সংখ্যালঘু নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বও রাষ্ট্রের। তাই তাদের উপাসনালয় থেকে শুরু করে বাড়িঘর—কোথাও যেন সাম্প্রদায়িক হামলা না হয়, সে বিষয়ে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে। বিশেষ করে আমাদের দেশে এ এক স্পর্শকাতর ইস্যু। সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমন চালিয়ে অতীতে অনেকেই অনেক ফায়দা লুটতে চেয়েছে। আমাদের বিজয়ের এ মুহূর্তে আনন্দের আতিশায্য যেন আমাদেরকে সংখ্যালঘুদের প্রতি জালেম বানিয়ে না দেয়, লক্ষ রাখতে হবে।
- আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ চাকরি ঠেকানো, উপরের নির্দেশনা কিংবা অন্য কোনো কারণে অনন্যোপায় হয়েও অন্যায় করে থাকতে পারে। কেউ অন্যায় করতে পারে স্বপ্রণোদিত হয়েও। আবার পুলিশ-বিজিবি-আর্মির এমন অনেককেই পাওয়া যাবে, যারা অন্যায়ে জড়াননি। তাই ঢালাওভাবে এখন পুলিশের ওপর আক্রমণ করা, থানা জ্বালিয়ে দেয়া ইত্যাদি মোটেও উচিত নয়। এসব অবশ্যই পরিহারযোগ্য।
আসুন, আমরা বিজয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিই। হিংসাবিদ্বেষ পরিহার করে শত্রুকেও আপন করে নেয়ার চেষ্টা করি। বিচার যদি চাই তাহলে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করি। আসুন, ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে, নবীজির সুন্নাহকে বুকে ধারণ করে একটি সুন্দর দেশ গড়ি।
সাহানা
August 9, 2024 at 5:43 amআমি ২ রাকাত শুকরিয়া নামাজ পরছি আলহামদুলিল্লাহ।
নার্গিস বানু
August 9, 2024 at 11:27 amযখন যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে পুলিশ শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের হয়েই কাজ করে -এটাই তাদের চাকুরি। থানায় আগুন দেয়া, জীবন বাঁচানোর জন্য বের হয়ে এলে ওদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হলো। এরা মুসলিম তো ছাড় – এরা মানুষই না।তাছাড়া কোটা আন্দোলনে ছাত্র লীগের ছেলেমেয়েরা ও অংশ নিয়েছে । অথচ তাদেরকে ও মেরে ফেলা হচ্ছে, বাড়ি ঘর ও জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে ।
এমন দেশ কি গড়তে পারে না এরা মারপিট করে, মন্দির ভেঙে নয়- আমাদের আচরণে কেবলই বাংলাদেশ কেনো সমগ্র ভারতবর্ষের মানুষ ইসলামের ছায়াতলে এসে জীবনের পূর্ণতা খুঁজে পাবে।!!
Muhammad
August 9, 2024 at 12:20 pmAlhamdulillah
Yakub Ali
August 9, 2024 at 12:26 pmI love Islaam ❤
Maruf ahmed
August 9, 2024 at 12:28 pmসহমত।আল্লাহ সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক। আমিন
Engineer Syed Sharfuddin Amed
August 9, 2024 at 12:31 pmAlmost every mosque & madrasas are captured by the previous goverment leaders. so it is very tough to rescue those from their hand.May Allah give the Muslim strength as they can make free their holy organization .
তাইয়্যেবা
August 9, 2024 at 1:10 pmআলহামদুলিল্লাহ্।
অনেক ভালো বক্তব্য। ধন্যবাদ। আল্লাহ্ আপনাদের মঙ্গল করুন। আমিন
আহলিয়া কামরুল হাসান
August 9, 2024 at 5:49 pmমা শা আল্লাহ। এই এপস টা প্রতিটি স্টুডেন্ট বিশেষ করে দ্বিনের জ্ঞান একদম জিরো যাদের তাঁদের কাছে সবাই পৌঁছে দেই
Jahan Ahmed
August 9, 2024 at 6:45 pmVery nice 👍
Mahady
August 10, 2024 at 6:18 amঅসম্ভব সুন্দর কিছু পরামর্শ। জাজাকাল্লাহ।
Amina Islam
August 11, 2024 at 5:50 amMassaallah 🌼
মোঃ মতিউর রহমান
August 13, 2024 at 6:10 amঅতি সুন্দর একটি পরামর্শ। আমরা জানিই না বিজয়ে আমাদের কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না। এটা একটি দিক নির্দেশনাও বটে। সুন্দরভাবে পরামর্শটি তুলে ধরার জন্য শুকরিয়া।
মো, শাহীন আলম
August 14, 2024 at 6:18 pmআলহামদুলিল্লাহ। ইন শা আল্লাহ, এখন থেকে স্বাধীনভাবে ইসলাম প্রচার করা যাবে।
Sweety Akhtar
August 20, 2024 at 2:22 pmআসসালামু আলাইকুম । তসবিহ তে কি কি পড়ব আর কত বার করে পড়ব যদি একটু বলতেন তাহলে ভালো হতো । আর, ইংরেজিতে “ইনশাআল্লাহ্” লিখার সময় শব্দ টা আলাদা আলাদা 3 টা অংশে (In Sha Allah) এভাবে লিখতে হয়? একসাথে (Insaallah / Inshallah)লিখলে কি অর্থ পরিবর্তন হয়ে যায়? অর্থাৎ ইংরেজি তে ইনশাআল্লাহ কিভাবে লিখব আর সালামের জবাব ইংরেজি তে কিভাবে লিখব? দয়া করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন ।
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
August 22, 2024 at 7:02 amওয়া আলাইকুুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ। তাসবীহ-এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পবিত্রতা বর্ণনা করা। এ জন্যে ‘সুবহানাল্লাহ’ ‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহ’ কিংবা এ জাতীয় কিছু পড়া যেতে পারে। এর নির্দিষ্ট কোনো সংখ্যা নেই। যতবার ইচ্ছা পড়তে পারেন।
আরবিতে ‘ইনশআল্লাহ’ তিনটি ভিন্ন ভিন্ন শব্দ। তবে বাংলায় বা ইংরেজিতে কিংবা অন্য কোনো ভাষায় লেখার সময় সে ভাষায় যেভাবে প্রচলিত সেভাবেই লিখুন। বাংলায় সাধারণত এক শব্দে ইনশাআল্লাহ লেখা হয়, তবে কেউ যদি ‘ইন শা আল্লাহ’ লেখে, তাহলে এটাকেও ভুল বলার সুযোগ নেই, অবশ্য এটা অপ্রচলিত। তবে এ জন্যে অর্থ পরিবর্তন হবে না। সালামের জবাবের ক্ষেত্রেও একই কথা।