Press ESC to close

বইপাঠ ও জ্ঞানচর্চা : ইসলামি দৃষ্টিকোণ

Post Updated at 31 Oct, 2024 – 7:38 AM

বাইতুল মুকাররমে ইসলামী বইমেলা শুরু হয়েছে (২২ অক্টোবর ২০২৪)। নানা সংকট ও বহুবিধ অনিশ্চয়তার আঁধার কেটে বইমেলার পর্দা উঠেছে। অন্যান্য সময় রবিউল আউয়ালে মেলাটির আয়োজন করা হলেও এবার রবিউসানীর শেষার্ধে শুরু হয়েছে। মেলাটি ঘিরে লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের উচ্ছ্বাস চোখে পড়ার মতো। পাঠকদের হৃদয়ের খোরাক মেটাতে ৮৫টি প্রকাশনী দারুণ দারুণ সব কন্টেন্টের বই নিয়ে এসেছে।

বইপাঠ ও জ্ঞানচর্চা একজন মুসলমানের আত্মার প্রশান্তি বয়ে আনে। মানবজাতির মুক্তির একমাত্র ঠিকানা ইসলাম বইপাঠ ও জ্ঞানচর্চার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করেছে। মুসলিমমাত্রই জ্ঞানমনস্ক হবে। বইয়ের উষ্ণ সান্নিধ্যে তার প্রাণ জুড়াবে। তরে তরে সাজানো লাইব্রেরীর বইগুলো দেখলেই তার মনে আনন্দের হিল্লোল বইবে। কারণ, বইপাঠের মাধ্যমে সে মুর্খতার অন্ধকার থেকে জ্ঞানের আলোকময় রাজপথে এগিয়ে যাবে। পড়াশোনার মাধ্যমে সে আপন মালিক আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার পরিচয় লাভ করবে। পাঠের স্নিগ্ধ সরোবরে অবগাহন করে মানবতার অহংকার রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুরভিত জীবনপাতায় নিজের জীবন পথের পাথেয় খুঁজে নেবে।

কুরআনের প্রথম কথা- পড়ো

মানবজাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শনের জন্য পৃথিবীতে আসা আল্লাহর পক্ষ থেকে  মানবজাতির জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার কুরআন মাজীদ। আর এর প্রথম নির্দেশনাই হচ্ছে “পড়ো”। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

إقرأ باسم ربك الذي خلق

“পড় তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন”। (সূরাতুল আলাক : ০১)

আয়াতে কারীমা থেকে এটা সূর্যালোকের ন্যায় প্রোজ্জ্বল যে, ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ হচ্ছে পড়াশোনা এবং জ্ঞানচর্চা। আর সেই পড়াশোনা হতে হবে আল্লাহর নামে। আল্লাহ প্রদত্ত দ্বীন ইসলামকে সুগভীরভাবে জানার এবং দ্বীনের চাহিদানুযায়ী জীবন গড়ার পবিত্র লক্ষ্যেই জ্ঞানচর্চার সুবিস্তৃত ময়দানে পদার্পণ করতে হবে।

কুরআন সুন্নাহয় জ্ঞান মানে কী?

জ্ঞান শব্দের আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে “ইলম“। কুরআন মাজীদে এবং হাদিস শরীফে ইলম শব্দের বহুল প্রয়োগ দেখা যায়। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য যে, কুরআন সুন্নাহর পরিভাষায় ইলম বা জ্ঞান হচ্ছে – দীন ও শরিয়তের ইলম (জ্ঞান)। যে ইলম অর্জন করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার পরিচয় লাভ করা যায়, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দীন নিয়ে এসেছেন তা শিখে সে অনুযায়ী জীবন সাজানোর প্রয়াস পাওয়া যায়, সেটাই ইলম। কুরআন-সুন্নাহয় এ ইলমের প্রতিই উৎসাহিত করা হয়েছে।

হ্যাঁ, এ কথাও অনস্বীকার্য, দুনিয়ার যাপিত জীবনে আমাদের আরও নানা ধরনের জ্ঞানার্জন করতে হয়। সে জ্ঞান যদি ইসলামি শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক না হয় এবং পার্থিব বিচারে উপকারী হয়, তাহলে তা অর্জনে কোনো বাধা নেই। এমনকি মানবসেবার উদ্দেশ্যে যদি কেউ তা শিখে ও চর্চা করে, তাহলে এর মাধ্যমেও সে অফুরন্ত নেকি হাসিল করতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে, এ জ্ঞান দুনিয়াবি জ্ঞান। প্রয়োজনের খাতিরে তা চর্চায় বাধা নেই, কিন্তু কুরআন-সুন্নাহয় যে জ্ঞানের কথা বলা হয়েছে, সেটা এ জ্ঞান নয়। সে জ্ঞান শরিয়তের জ্ঞান।

কাদের লেখা বই পড়ব

দীনি জ্ঞান অর্জন করার জন্য কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞানে যারা পরিপক্ক তাদের লেখা বইপত্র অধ্যয়ন করতে হবে। এমন  লেখকের লেখা বই পাঠ করতে হবে, যাদের প্রতি আস্থা রাখা যায়। যে লেখক আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের অনুসারী, হাজার বছরের অধিক কাল ধরে চলে আসা সহিহ ইসলামি শিক্ষার ধারক যিনি, এমন লেখকের লেখা বই-ই বেছে নিতে হবে আমাদের।

জানা কথা, ইসলামের নামে নানারকম বিভ্রান্তি সমাজে ছড়ানো রয়েছে। এ পরিস্থিতি কেবল বর্তমান বাংলাদেশের নয়, বরং শত শত বছর ধরেই নানান নামে নানান পরিচয়ে নানান রকম বিভ্রান্তি সমাজে ছিল ও আছে। ইসলামের নামে নানান রকম ভ্রান্ত দলের কিছুটা ইঙ্গিত স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও দিয়ে গেছেন। আর প্রত্যেক লেখক তো তার চিন্তা-আদর্শ-বিশ্বাসই তার লেখার মাধ্যমে প্রকাশ করবে। তাই ইসলামি বই কিংবা কুরআন-হাদীসের দলিলের আলোকে লেখা বই দেখলেই তা হাতে তুলে নেয়া যাবে না। বরং প্রয়োজন সতর্কতা, সচেতনতা।

এ ক্ষেত্রে আস্থাভাজন কোনো আলেম বা দীনি বিষয়ে বিস্তর জানাশোনা আছে এমন কারও সঙ্গে পরামর্শ করে নেয়াটাই নিরাপদ পন্থা। এও মনে রাখতে হবে,   দক্ষ বিজ্ঞ কারও তত্ত্বাবধানে বই নির্বাচনের পর আপনি যখন অধ্যয়ন শুরু করবেন তখনো কোথাও আপনি আটকে যেতে পারেন। কোথাও খটকা লাগতে পারে। কোন বিষয় বুঝে না আসলে বা অস্পষ্ট মনে হলে বিজ্ঞ আলেমদের কাছ থেকে তা বুঝে নিন। নিজের মতো করে বুঝ গ্রহণ করা বা ব্যাখ্যা দেয়ার কোন সুযোগ নেই।

জ্ঞান বৃদ্ধির দুআ করুন

শেষ কথা, জ্ঞানার্জনে কোনো সমাপ্তি নেই, নেই বিরতি।  কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জ্ঞান বৃদ্ধির দুআ করতে নির্দেশনা দিয়েছেন।  আল্লাহ তায়ালা বলেন-

قل رب زدني علما

নবী! আপনি বলুন, হে আল্লাহ! আপনি আমাকে জ্ঞানে আরো উন্নতি দান করুন। (সূরা তোয়াহা: ১১৪)

 

লেখক: মাওলানা আব্দুল্লাহ আলমামুন আশরাফী, শিক্ষক, জামিয়া গাফুরিয়া মাখযানুল উলুম টঙ্গী গাজীপুর। খতীব, আউচপাড়া জামে মসজিদ টঙ্গী, গাজীপুর।

Comments (3)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাইট হিট কাউন্টার

সর্বমোট পোস্ট ভিউ: ২,০১৯,৮৪৫

পোস্ট কপি করার অপশন বন্ধ রাখা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পোস্টের লিংক কপি করুন