Post Updated at 29 Feb, 2024 – 10:20 PM

তায়াম্মুম কখন করা যায়

তায়াম্মুম হলো ওজু-গোসলের বিকল্প। যদি কেউ এমন অসুস্থ হয়―ওজু করলে তার রোগ বৃদ্ধি পাবে কিংবা যদি কেউ ওজু করার মতো পানি না পায় তাহলে ওজুর পরিবর্তে সে তায়াম্মুম করবে। গোসল ফরজ অবস্থায় যদি কেউ এমন সংকটের মুখোমুখি হয় তাহলে সেও তায়াম্মুম করবে। ওজুর পরিবর্তে হোক আর গোসলের পরিবর্তে হোক, তায়াম্মুমের নিয়ম একটাই।

 

তায়াম্মুমের ফরজ কয়টি

তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি। যথা:

  1. নিয়ত করা
  2. সমস্ত মুখ মাসেহ করা
  3. দুই হাত কনুইসহ মাসেহ করা

তায়াম্মুম কীভাবে করতে হয়

  1. প্রথমে তায়াম্মুমের নিয়ত করবে। মনে মনে এভাবে বলা যেতে পারে―আমি পবিত্র হওয়ার জন্যে কিংবা নামাজ পড়ার জন্যে তায়াম্মুম করছি।
  2. এরপর উভয় হাত পাক-পবিত্র মাটিতে কিংবা মাটি জাতীয় কিছুতে রাখবে। হাতে যদি মাটি লেগে থাকে তাহলে দুই হাত ঝেড়ে নেবে। এরপর দুই হাত দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করবে। এরপর দাড়ি খিলাল করবে। তায়াম্মুমেও দাড়ি খিলাল করা সুন্নত। খিলাল না করলে তায়াম্মুম হয়ে যাবে ঠিক, তবে একটি সুন্নত বাদ থেকে যাবে।
  3. তারপর আবার উভয় হাত আগের মতো মাটিতে রেখে এক হাত দিয়ে আরেক হাতের কনুইসহ মাসেহ করবে। এভাবে উভয় হাত মাসেহ করবে। হাতে আংটি-চুড়ি ইত্যাদি থাকলে এগুলো সরিয়ে এমনভাবে মাসেহ করতে হবে, যেন কনুই পর্যন্ত কোনো অংশই মাসেহ থেকে বাদ না যায়। এরপর হাতের আঙ্গুল খেলাল করে নেবে।

তায়াম্মুমের ক্ষেত্রেও যদি চেহারা ও হাতের সামান্য পরিমাণও মাসেহ করা না হয়, তবে তায়াম্মুম সহীহ হবে না।

কোন কোন বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে

মাসআলা : পবিত্র মাটি, কংকর, বালু, পাথর, মাটির তৈরি কাঁচা বা পাকা ইট, ধুলাবালি, পাথর বা ইটের তৈরি দেয়াল, মাটির পাত্র ইত্যাদি দিয়ে তায়াম্মুম করা যায়। মাটি জাতীয় নয় এমন কিছুর উপর তায়াম্মুম করা জায়েজ নয়। বাসে বা ট্রেনে সফরের সময়ও তায়াম্মুমের প্রয়োজন হতে পারে। এ বাহনগুলো যেহেতু লোহা দিয়ে তৈরি, তাই তাতে তায়াম্মুম করা যাবে না। তবে যদি বাস বা ট্রেনের গায়ে বেশি পরিমাণে ধুলা জমে থাকে, তাহলে সে ধুলার উপর তায়াম্মুম করা যাবে। তায়াম্মুম করার সময় হাতে ধুলা লাগা জরুরি নয়। বরং মাটি জাতীয় কোনো বস্তু হলেই তাতে তায়াম্মুম করা যাবে।

তায়াম্মুম কতদিন করা যাবে

মাসআলা : তায়াম্মুমের কোনো মেয়াদ নেই। তায়াম্মুম করার মতো ওজর যতদিন থাকে, ততদিনই তায়াম্মুম করা যাবে। এ নিয়ে সন্দেহ করার কিছু নেই। কারণ তায়াম্মুম হলো ওজু-গোসলের বিকল্প। ওজু-গোসল করলে যেমন পবিত্রতা হাসিল হয়, তায়াম্মুমের মাধ্যমেও তেমনি পবিত্রতা হাসিল হয়।

তায়াম্মুম কখন ভেঙ্গে যায়

মাসআলা : যেসব কারণে ওজু ভেঙ্গে যায়, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভেঙ্গে যায়। একইভাবে কেউ যদি ওজু করার মতো পানি না থাকার কারণে তায়াম্মুম করে, তাহলে ওজু করার মতো পানি পেলে তার তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে। অনুরূপভাবে যদি অসুস্থ অবস্থায় কেউ তায়াম্মুম করে, এরপর তার অসুস্থতা কেটে যায়, তাহলেও নতুন করে ওজু করতে হবে। সুস্থ হয়ে গেলে অসুস্থ অবস্থার তায়াম্মুম ভেঙ্গে যায়। আর যদি ফরজ গোসলের পরিবর্তে কেউ তায়াম্মুম করে তাহলে গোসল করার মতো পানি পেলে কিংবা অসুস্থতা কেটে গেলে গোসল করে নিতে হবে।

তায়াম্মুম সম্পর্কিত আরও কিছু মাসআলা

কতটুকু দূরত্বে পানি পাওয়া না গেলে তায়াম্মুম করা যায়

মাসআলা : ওজু-গোসলের জন্যে যদি পানি না পাওয়া যায় তবে তায়াম্মুম করা যায়। পানি না পাওয়ার অর্থ হলো- ২০০০ গজ (অর্থাৎ প্রায় ২ কিলোমিটার) এর ভেতর পানি না থাকা। এতটুকু দূরত্বের মধ্যে যদি পানি না পাওয়া যায় তবেই তায়াম্মুম করা যাবে।

পানি পাওয়ার পর তায়াম্মুম করে আদায়কৃত নামাজ দ্বিতীয়বার পড়তে হবে কিনা

মাসআলা : তায়াম্মুম করার পর যখনই পানি পাবে, তখন তো তায়াম্মুম ভেঙ্গে যাবে ঠিক। কিন্তু পানি পাওয়ার আগে সেই তায়াম্মুম দিয়ে যে নামাজ আদায় করা হয়েছে তা দ্বিতীয়বার পড়তে হবে না। তবে পানি যদি নামাজ পড়া অবস্থায় পাওয়া যায়, তাহলে ওজু করে নামাজ আবার শুরু থেকে পড়তে হবে।

সফরের সময় বাস-ট্রেন পানির পাশ দিয়ে গেলে

মাসআলা : বাসে বা ট্রেনে সফররত অবস্থায় যদি কেউ পানি না পেয়ে তায়াম্মুম করে, এরপর পানির পাশ দিয়ে কিংবা পানির উপর দিয়ে ট্রেন চলে যায় তাহলেও তায়াম্মুম ভাঙবে না। কারণ এ পানি ব্যবহার করার মতো সুযোগ তার নেই। এমনকি স্টেশনে ট্রেন থামার পরও যদি ওজু করতে গেলে ট্রেন চলে যাওয়ার আশংকা থাকে, তাহলেও তায়াম্মুম ভাঙবে না এবং এ অবস্থায় ওজু করাও জরুরি নয়।

ওজু করলে যদি খাওয়ার পানির সংকট হয়

মাসআলা : যদি কারও সঙ্গে এতটুকু পানি থাকে, যা দিয়ে ওজু করে নিলে তার খাওয়ার পানির সংকট দেখা দেবে, তাহলে সে ওজু না করে তায়াম্মুম করবে।

ফরজ গোসলে অক্ষম কেউ যদি ওজু করতে সক্ষম হয়

মাসআলা : কারও গোসল ফরজ হলো, কিন্তু (গোসল করার মতো পানি না থাকার কারণে কিংবা অসুস্থতার কারণে) পানি ব্যবহার করে গোসল করার সামর্থ তার নেই, তবে ওজু করার সামর্থ আছে, তাহলে সে গোসলের পরিবর্তে শুধুই তায়াম্মুম করবে, ওজু করতে হবে না। এরপর যখন তার ওজু ভেঙ্গে যাবে তখন তাকে ওজু করতে হবে। [রদ্দুল মুহতার ১/২৫৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৩০]

ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে অক্ষম হলে

মাসআলা : কেউ যদি এমন অসুস্থ হয়, ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করলে তার সমস্যা হবে কিন্তু গরম পানি ব্যবহারে তার কোনো সমস্যা হবে না, এমতাবস্থায় যদি পানি গরম করার মতো সুযোগ তার থাকে, তাহলে পানি গরম করেই ওজু বা গোসল করতে হবে। আর যদি পানি গরম করার মতো কোনো ব্যবস্থা না থাকে, তাহলেই কেবল তায়াম্মুম করতে পারবে।

ফরজ নামাজের জামাত, ঈদের নামাজ ও জানাজার নামাজের জন্যে তায়াম্মুম

মাসআলা : ওজু করতে গেলে ঈদের নামাজ কিংবা জানাজার নামাজ যদি ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে তায়াম্মুম করেও এ দুই নামাজে শরিক হওয়া যাবে। এ ছাড়া অন্য কোনো নামাজ, যেমন, দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য নয়। এসব নামাজের জামাত ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলেও ওজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা জায়েজ হবে না। এমনকি নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও ওজুর পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যাবে না; ওজু করেই নামাজ পড়তে হবে।

Comments
  1. আমার একটি প্রশ্ন হলো;

    ইমাম যদি তায়াম্মুমকারী হোন৷ আর মুক্তাদি অযুকারী হয়৷ ত্হলে, ইমাম সাহেবের ইমামতি শুদ্ধ হবে কী?

    1. হবে।

  2. আলহামদুলিল্লাহ অনেক কিছু জানলাম

  3. আমার ঠান্ডার প্রকট সমস্যা, শীতকালে পানি দিয়ে ওযু করতে পারি না। সে ক্ষেত্রে ইট, পাথর, না পেলে সামান্য পানি হাতে নিয়ে কি তায়মুম করা যাবে?

    1. পানি দিয়ে তো তায়াম্মুম করা যায় না। পানি যারা ব্যবহার করতে পারে না, তাদের জন্যেই তায়াম্মুমের বিধান। ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে অসুবিধা হলে গরম পানি ব্যবহার করুন। আর তাও যদি সম্ভব না হয় এবং এটি যেহেতু আপনার নিয়মিত সমস্যা, তাই আগে থেকেই মাটি বা মাটি জাতীয় কিছু সংগ্রহে রাখুন।

  4. আলহামদুলিল্লাহ অনেক তথ্য জানলাম। সুন্দর এ্যাপস

  5. তয়াম্মুম করে কি ফরজ,সুন্নত,ওয়াজিব, নফল সব সালাতই পরা যায়?

  6. বাসে বা ট্রেনে হাত মূছে নেয়ার মতো মাটি, বালি ইত্যাদি কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে তায়াম্মুমের বিধান কি?

    1. যদি ওজু কিংবা তায়াম্মুমের কোনো ব্যবস্থাই না থাকে, তাহলে ওজু ছাড়াই নামাজের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, এরপর যখন ওজু বা তায়াম্মুমের সুযোগ হয় তখন তা করে আগের নামাজ আবার আদায় করবে।

  7. আমার দাতের সমস্যা মানে আমার দাতে নরমাল পানি লাগলেও খুব ব্যাথা করে। তাহলে আমি কি এই মুহূর্তে তায়ামুম করতে পারবো??

    1. না, তায়াম্মুম করা যাবে না। আপনি প্রয়োজনে কুলি করা ছাড়াই ওজু করে নিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ