Post Updated at 29 Feb, 2024 – 10:18 PM
গোসলের ফরজসমূহ
গোসলের ফরজ তিনটি। যথা:
- ভালোভাবে কুলি করা।
- নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো। (ভেজা আঙ্গুল দিয়ে নাকের ভেতর শুধু মুছে নেয়া যথেষ্ট নয়।)
- সমস্ত শরীর ধৌত করা।
গোসলের ধারাবাহিক সুন্নত পদ্ধতি
- প্রথমে উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধুয়ে নেবে।
- এরপর লজ্জাস্থান ধুয়ে নেবে। হাতে ও লজ্জাস্থানে কোনো নাপাকি থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় প্রথমে হাত, এরপর লজ্জাস্থান ধোয়া সুন্নত।
- এরপর দেখতে হবে শরীর বা কাপড়ে কোথাও নাপাক কিছু লেগে আছে কি না। থাকলে তা ধুয়ে নিতে হবে।
- এরপর ধারাবাহিকভাবে পরিপূর্ণ ওজু করবে। কিন্তু যদি কেউ এমন কোথাও দাঁড়িয়ে গোসল করে, যেখানে গোসলের পানি জমে থাকে, তাহলে পা প্রথমে না ধুয়ে গোসল শেষে পা ধুয়ে নেয়া ভালো। আর এমন না হলে ওজুর সময়ই পা ধুয়ে নেবে।
- এরপর তিনবার করে পানি ঢালবে। প্রথমে মাথায়, এরপর ডান কাঁধে, পরে বাম কাঁধে।
- পানি এমনভাবে ঢালবে যেন পুরো শরীরে পানি গড়িয়ে পড়ে।
[সূত্র : সহীহ বুখারী, হাদীস ২৪৮, ২৭২; আদদুররুল মুখতার, ১/২৯২-২৯৫]
গোসল সম্পর্কিত কিছু মাসআলা
গোসল কখন ফরজ, কখন সুন্নত
মাসআলা : গোসল ফরজ হয়—১. উত্তেজনার সঙ্গে বীর্যপাত হলে, ঘুমন্ত অবস্থায় হোক কিংবা জাগ্রত অবস্থায়, ২. সহবাস করলে, ৩. নারীরা হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হলে।
মাসআলা : গোসল করা সুন্নত—১. জুমার নামাজের জন্যে, ২. ঈদের নামাজের জন্যে, ৩. হজ বা উমরার ইহরাম পরিধান করার জন্যে, ৪. আরাফার দিনে (হাজী সাহেবদের জন্যে)।
[সূত্র : আদদুররুল মুখতার, ১/২৯৫-৩০৯]
গোসলের পূর্বে নিয়ত করা ও কালেমা পড়া
মাসআলা : গোসল করার পূর্বেও পবিত্রতার নিয়ত করুন। তবে এ নিয়ত করা জরুরি নয়। নিয়ত করুক বা না করুক, যদি কেউ পানি ঢেলে পুরো শরীর ভিজিয়ে দেয়, কিংবা বৃষ্টিতে পুরো শরীর ভিজে যায়, এমনকি যদি নদী বা পুকুর থেকে ডুব দিয়ে ওঠে, আর এর সঙ্গে ভালোভাবে কুলি করে নেয় এবং নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছায়, তাহলেই গোসল হয়ে যাবে। গোসলের সময় কোনো কালেমা পড়া কিংবা কালেমা পড়ে পানিতে ফুঁ দেয়ারও কোনো নিয়ম নেই। তবে অবশ্যই লক্ষ রাখতে হবে―পুরো শরীরে পানি পৌঁছেছে কিনা। যদি একটি লোমের জায়গাও শুকনো থাকে, তাহলেও গোসল হবে না।
গোসলের সময় কোনো অঙ্গ ভুলে ধোয়া না হলে
মাসআলা : গোসলের সময় ভুলে কোনো অঙ্গ ধোয়া না হলে, কিংবা গোসলের পরও যদি কোনো অঙ্গ শুকনো থেকে যায় তাহলে শুধু ঐ অঙ্গটি ধুয়ে নিলেই হবে। আবার নতুন করে গোসল করতে হবে না। তবে যদি শুকনো অঙ্গটি ভেজা হাতে মাসেহ করে নেয় তাহলে যথেষ্ট হবে না। বরং তা ধুয়ে নিতে হবে।
গোসলের আগে ওজু না করলে
মাসআলা : গোসলের আগে পরিপূর্ণরূপে ওজু করা সুন্নত। যদি কেউ ওজু না করে তাহলেও গোসল হয়ে যাবে। গোসল করার পর আর ওজু করার প্রয়োজন নেই। তবে ফরজ গোসলের সময় ওজু না করলে অবশ্যই ভালোভাবে কুলি করতে হবে এবং নাকে পানি দিতে হবে। এদুটি গোসলের ফরজ। এদুটি ছাড়া গোসল সম্পন্ন হবে না। [মাসিক আলকাউসার, ফেব্রুয়ারি ২০০৫]
চুলে যদি বেণি বা খোপা বাঁধা থাকে
মাসআলা : মেয়েদের চুলে যদি বেণি বা খোপা করা থাকে, তাহলে গোসলের সময় বেণি-খোপা খুলে সব চুল ধোয়া জরুরি নয়। বরং চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছালেই হবে। তবে সবগুলো চুলের গোড়াতেই পানি পৌঁছাতে হবে। আর যদি বেণি না থাকে, তাহলে চুলের গোড়া ও চুল সবই ধুয়ে নিতে হবে। কিছুই শুকনো রাখা যাবে না। আর বেণি রেখে যদি চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানো সম্ভব না হয় তাহলে বেণি খুলে ফেলতে হবে। তখন চুল ও চুলের গোড়া সবই ধুয়ে নিতে হবে।
মাসআলা : বেণি পাকানো চুল ধুইতে হয় না―এ বিধান শুধুই মহিলাদের জন্যে প্রযোজ্য। (বেণি করা পুরুষের জন্যে বৈধ না হওয়া সত্ত্বেও) যদি কোনো পুরুষ চুলে বা দাড়িতে বেণি করে তাহলে গোসলের সময় তাকে বেণি খুলে চুল-দাড়ি ধুয়ে নিতে হবে। অন্যথায় গোসল হবে না।
নাপাক কাপড় নিয়ে গোসল করতে হলে
মাসআলা : গোসলের সুন্নত পদ্ধতি হলো, কাপড়ে বা শরীরে যদি কোনো নাপাকি থাকে, তবে আগে সে জায়গাটি ধুয়ে পাক করে নেয়া, যাতে অন্য কোথাও নাপাকি ছড়িয়ে না পড়ে; এরপর গোসল করা।
তবে যদি কেউ এ নিয়মে গোসল না করে, বরং নাপাকি দূর না করেই গোসল শুরু করে দেয়, কিংবা নাপাক জায়গা চিহ্নিত না থাকে, তবে অধিক পরিমাণে পানি ঢেলে ভালোভাবে গোসল করতে হবে, যেন কাপড় ও শরীরের নাপাকি দূর হয়ে যায়। [আদদুররুল মুখতার, 1/157, 333]
মাসআলা : কারও দেখার সম্ভাবনা নাই―এমন জায়গায় প্রয়োজন হলে পুরো নগ্ন অবস্থায়ও গোসল করা যেতে পারে। তবে গোসলের সময়ও যথাসম্ভব সতর ঢেকে রাখাই উত্তম। নগ্ন হয়ে গোসল করলে সেসময় কেবলার দিকে মুখ করবে না। আর যদি সতর ঢাকা থাকে, তাহলে কেবলামুখী হয়ে গোসল করাতেও কোনো সমস্যা নেই।
গোসলের সময় ভেজা কাপড়ে শরীর মুছে দেয়া
মাসআলা : গোসলের সময় শরীরে পানি ঢেলে ধোয়া জরুরি। যদি পানি না ঢেলে ভেজা কোনো কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দেয় তবে গোসল হবে না। একইভাবে নাকের ভেতর নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো জরুরি। যদি কেউ ভেজা আঙ্গুল দিয়ে নাকের ভেতরটা ভিজিয়ে নেয়, তবে এতে নাকে পানি পৌঁছানোর ফরজ আদায় হবে না।
গোসল ফরজ হলে শুধু লজ্জার কারণে গোসল না করা
মাসআলা : গোসল ফরজ হলে শুধু লজ্জার কারণে গোসল না করে তায়াম্মুম করার সুযোগ নেই। এমতাবস্থায় তায়াম্মুম করে নামাজ পড়লে তা আদায়ও হবে না। আর স্বভাবগত লজ্জার কারণে শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করা যায় না।
আতিক
November 11, 2023 at 4:56 amআসসালামুয়ালাইকুম। ওজু করে গোসল করার সময় যদি গোপন অংগে হাত লেগে যায় তাহলে গোসলের পর আবার ওজু করতে হবে কিনা? কারণ, গোপন অঙ্গে হাত লেগে গেলে ওজু ভংগ হয়!
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
November 16, 2023 at 12:18 pmওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
না ভাই, এতে ওজু ভাঙ্গে না।
মোঃ আবুল কালাম মৃধা
November 13, 2023 at 6:36 amজাযাকাল্লাহু খাইরান। অনেক উপকারী ও গুরুত্বপূর্ণ লেখা। আমরা অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ ও ছোটখাটো জিনিস জানিনা। আপনার লেখা থেকে সবাই উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ । মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনাকে নেক হায়াত দান করুন। আমিন।
মো: লুৎফুল কিবরিয়া
November 14, 2023 at 6:56 pmআসসালামু আলাইকুম। আলহামদুলিল্লাহ। অনেক জরুরী বিষয় জানতে পারলাম। আমি জানতে চাই- নগ্ন হয়ে গোসলের পর অথবা গোসলের সময় হাটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে পুণরায় অজু করতে হবে ?
Muslims Day Desk
November 14, 2023 at 9:22 pmসতর খুলে যাওয়ার সাথে ওজু নষ্ট হওয়ার কোনো সম্পর্ক নাই। হাটুর উপরে কাপড় উঠলে বা সম্পূর্ণ সতরও খোলা হলে ওজু নষ্ট হবে না। তাই আপনার প্রশ্নের সিনারিওতে, গোসলের পর পুনরায় ওজু করার প্রয়োজন নেই।
কোন কোন কারণে ওজু নষ্ট হয়, আর কোন কোন কারণে ওজু নষ্ট হয় না সে বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে এই ব্লগ পোস্ট থেকে।
Humaira Anjum
November 14, 2023 at 9:26 pmফরজ গোসলে ওজু না করলে কি গোসল হবে? আর ওজু বাদ থাকলে কি গোসল পরই নামাজ পড়া যাবে কি?
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
November 16, 2023 at 12:22 pmগোসলের শুরুতে ওজু করা সুন্নত। তবে যদি ওজু না করেও পুরো শরীর ভালো করে ধোয়া হয় এবং ফরজগুলো আদায় করা হয় তবে গোসল হয়ে যাবে এবং নামাজও পড়া যাবে।
Abir
November 17, 2023 at 3:39 pmপ্রশ্ন ১: অনেক সময় কাপড়ে বীর্য লেগে থাকে। কিন্তু কোথায় লেগে আছে সেটা জানা সম্ভব হয়না। কারন সেটা শুকিয়ে যায়।
এই অবস্থায় ফরয গোসলের ক্ষেত্রে সেই কাপড়ের নাপাকি দুর করা সম্ভব হয়না। তো সেই কাপড় পড়েই ফরয গোসল করা যাবে কি? নাকি অন্য আরেকটা কাপড় পড়ে ফরয গোসল করতে হবে?
প্রশ্ন ২: বদ্ধ বাথরুমে উলঙ্গ হয়ে ফরয গোসল করা যাবে কি?
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
November 24, 2023 at 8:15 amউত্তর ১ : নাপাকি চিহ্নিত করতে না পারলে সম্ভাব্য নাপাক জায়গাগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিন। ভালো করে পানি ঢেলে গোসল করুন। কাপড় পরিবর্তন করে গোসল করার প্রয়োজন নেই।
উত্তর ২. যাবে, তবে উত্তম হলো বদ্ধ বাথরুমেও কাপড় পরেই গোসল করা।
Habib khan
November 20, 2023 at 5:13 amAssalamualaikum ouarahamatullah barakathu
মাহমুদা
November 24, 2023 at 3:14 pmগোসল ,ওযু এবং কাপড় ধোয়ার সময় পানি ব্যাবহারের পরিমাণ টা যদি বলতেন, খুবই উপকৃত হতাম ।আমি জানি গোসলে ১ সা এবং ওযুতে ১ মুদ পরিমাণ পানি ব্যাবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । কিন্তু কাপড় ধোয়ার নিয়ম এবং পানির পরিমাণ জানি না।একটু যদি বলতেন খুবই ভালো হতাম,ইন শা আল্লাহ। জাযাকাল্লাহু খইরান
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
December 7, 2023 at 8:14 pmকাপড় ধোয়ার জন্যে পানির বিশেষ কোনো পরিমাণের কথা হাদীসে বর্ণিত হয়নি। তবে ওজু-গোসলের মতো কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রেও পানি ব্যবহারে অপচয় করা যাবে না। পরিমিত পরিমাণ পানি ব্যবহার করতে হবে।
আর কাপড় ধোয়ার নিয়ম সম্বলিত একটি স্বতন্ত্র পোস্ট ইনশাআল্লাহ শীঘ্রই আসবে।
মুসলিমসডে’র সঙ্গে থাকার জন্যে শুকরিয়া।
Ahmad Zafri
December 11, 2023 at 8:33 pmপ্রশ্ন-১ঃ আবদ্ধ জায়গায় উলঙ্গ অবস্থায় ফরয গোসল করার আগে বা পরে ওযু না করে কি সেই গোসল দিয়ে পরবর্তীতে সব ধরণের ইবাদত করা যাবে?
প্রশ্ন-২ঃ প্রচন্ড শীতের রাতে ফজরের ওয়াক্ত হবার ১ বা ১ঃ৩০ ঘন্টা আগে স্বপ্নদোষ হলে ঐ সময় তাৎক্ষনিক ফরজ গোসল না করে যদি সূর্যোদয়ের পর গোসল করে সালাত আদায় করি তাহলে কোনো সমস্যা হবে?
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
December 31, 2023 at 3:48 pmউত্তর ১. যাবে। তবে গোসলের আগে যেহেতু ওজু করা সুন্নত, তাই এ সুন্নতের সওয়াব থেকে বঞ্চিত থাকতে হবে।
২. গোসল যখন ফরজ হয় কেউ চাইলে তাৎক্ষণিক গোসল না করে পরেও করতে পারে। অসুবিধা নেই। তবে উত্তম হলো, তখন ওজু করে নেয়া। কিন্তু পরবর্তী নামাজের সময় শেষ হওয়ার পূর্বে অবশ্যই গোসল সেরে নামাজ আদায় করতে হবে।
Md belal
January 10, 2024 at 4:30 pmআসসালামু আলাইকুম বাথরুমের ঝর্নায় গোসল করার সময় গোসলের পানি নিছ থেকে/ ফ্লোর থেকে পুনরায় শরীরে পড়লে তা কি নাপাক পানি বলে গন্য হবে.?
Muslims Day Desk
January 11, 2024 at 9:35 amজ্বি না। যদি সেখানে দৃশ্যমান কোনো নাপাকি দেখা না যায়, যদি নিশ্চিত ও দৃশ্যমান নাপাকি নিচ থেকে ছিটে গায়ে না আসে তাহলে না নাপাক পানি বলে গণ্য হবে না
Abdullah
April 17, 2024 at 10:53 pmফরজ গোসল করার পর যদি কেউ শরীরের কোথাও নাফাকি দেখতে পায়, সেক্ষেত্রে কী করতে হবে? নতুন করে গোসল করতে হবে নাকি নাফাকি ধুয়ে নিলেই হবে?
মাওলানা শিব্বীর আহমদ
April 22, 2024 at 4:51 pmনাপাকি ধুয়ে নিলেই হবে।