Post Updated at 27 May, 2024 – 7:58 AM

পরিবারের পক্ষ থেকে একজন কুরবানি আদায় করলেই যথেষ্ট হবে কিনা?

প্রশ্ন : একটি পরিবারে যদি একজন কুরবানি আদায় করেন, তবে কি যথেষ্ট হবে, না সকলের পক্ষ থেকেই কুরবানি আদায় করতে হবে?

 

উত্তর : কুরবানি একটি ওয়াজিব আমল। প্রাপ্তবয়স্ক যার কাছে নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হয়। এটি একটি ব্যক্তিগত আমল। যিনি বা যারা নেসাবের অধিকারী, তাদের প্রত্যেককেই কুরবানি করতে হবে। পরিবারের অনেকের পক্ষ থেকে এক বা একাধিক জনের কুরবানি যথেষ্ট হবে না। স্বামী-স্ত্রী কিংবা বাবা-ছেলে প্রত্যেকের যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে, তবে তাদের উভয়কে ভিন্ন ভিন্ন কুরবানি আদায় করতে হবে। স্বামীর কুরবানি স্ত্রীর জন্যে যথেষ্ট নয়, বাবার কুরবানি ছেলের জন্যে যথেষ্ট নয়। পরিবার যৌথ হলেও নেসাবের অধিকারী প্রত্যেকের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন কুরবানি করতে হবে।

কুরবানির নেসাব সম্পর্কে জানতে আমাদের ব্লগে প্রকাশিত কুরবানির ফজিলত ও মাসায়েল শীর্ষক লেখাটি পড়ুন।

কুরবানিতে শরিকসংখ্যা বেজোড় হওয়া জরুরি কিনা?

প্রশ্ন : শরিকে কুরবানি করলে সাত শরিকে কুরবানি করতে হয় বলে জানি। কিন্তু যদি সাতের কম সংখ্যক শরিকে কুরবানি করা হয়, তবে কি শরিকদের সংখ্যা বেজোড় হওয়া জরুরি?

উত্তর : গরু-মহিষ-ঊট এ তিনটি পশুর কুরবানিতে একেকটিতে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারেন। এর অর্থ এই নয়- শরিকের সংখ্যা সাতই হতে হবে। বরং একটি পশু যেমন একা কুরবানি করা যায়, তেমনি দুই থেকে সাত- যে কোনো সংখ্যায় শরিকও হওয়া যায়। শরিক বেজোড় হওয়া জরুরি কোনো বিষয় নয়। তবে সাতের বেশি শরিক হওয়া যাবে না।

কুরবানির পশুতে আকিকার নিয়তে শরিক হওয়া যাবে কিনা?

প্রশ্ন : কুরবানির গরুতে কেউ যদি তার সন্তানের জন্যে আকিকার নিয়তে শরিক হন, তবে কি কুরবানি আদায় হবে?

উত্তর : হ্যাঁ, কুরবানির পশুতে আকিকার নিয়তেও শরিক হওয়া যাবে। যিনি কুরবানির নিয়তে শরিক হচ্ছেন, তিনিও চাইলে তার সন্তানের জন্যে আকিকার নিয়তে শরিক হতে পারেন। আবার একজন কুরবানির নিয়তে, আরেকজন আকিকার নিয়তেও শরিক হতে পারবেন।

তবে উত্তম হলো, আকিকাকে কুরবানির ঈদের জন্যে বিলম্বিত না করে সন্তান জন্মের ৭, ১৪ কিংবা ২১ তম দিনেই তা আদায় করে নেয়া।

কুরবানির পশুর নির্দিষ্ট সংখ্যক দাঁত ওঠা জরুরি কিনা?

প্রশ্ন : পশুর নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ হলে সাধারণত নির্দিষ্ট সংখ্যক দাঁত ওঠে। এ দাঁত দেখে পশুর বয়স বোঝা যায়। আবার কুরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্যে পশুর নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ হওয়াও জরুরি। কথা হলো, এ বয়স বোঝার জন্যে দাঁত ওঠা কি জরুরি?

উত্তর : বয়স পূর্ণ হলে সাধারণ দাঁত ওঠে, কিন্তু এ দাঁত নাও উঠতে পারে। বয়স পূর্ণ হয়ে গেলেও দাঁত ওঠা বিলম্বিত হতে পারে। তাই কুরবানি শুদ্ধ হওয়ার জন্যে পশুর নির্দিষ্ট সংখ্যক দাঁত ওঠা জরুরি নয়। বরং বিক্রেতা যদি বলেন, এ পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে, তবেই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে বিক্রেতার কথাই গ্রহণযোগ্য। দাঁত ওঠার প্রয়োজন নেই।

কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্যে নগদ টাকা থাকা জরুরি কিনা?

প্রশ্ন : মহিলাদের অনেকের কাছেই নগদ টাকা থাকে না। কিন্তু তাদের কাছে স্বর্ণালঙ্কার থাকার কারণে তারা নেসাবের মালিক। এ অবস্থায় তাদের ওপর কি কুরবানি ওয়াজিব? ওয়াজিব হলে তারা এ কুরবানি কীভাবে আদায় করবেন?

উত্তর : কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্যে হাতে নগদ টাকা জরুরি নয়। বরং যে কেউ নেসাবের মালিক হয়, তার ওপরই কুরবানি ওয়াজিব। আর কুরবানি যদি কারও ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়, তখন যেভাবেই হোক, তাকে কুরবানি আদায় করতে হবে। এমন ব্যক্তি প্রয়োজনে ঋণ নিতে পারেন, কিংবা কোনো একটি সম্পদ বিক্রি করতে পারেন। যদি অন্য কেউ তার অনুমতিক্রমে কুরবানি আদায় করে দেয়, যেমন স্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বামী, মায়ের পক্ষ থেকে ছেলে কুরবানি করল, এতেও কুরবানির ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।

কুরবানির পশু জবাই করার সময় কুরবানিদাতার নাম পড়ে নেয়া জরুরি কিনা?

প্রশ্ন : যাদের পক্ষ থেকে কুরবানি করা হয়, কুরবানির পশু জবাইয়ের সময় তাদের নাম পড়াকে জরুরি মনে করা হয়। এটা কতটুকু ঠিক?

উত্তর : কুরবানির পশু জবাই করার সময় কুরবানিদাতাদের নাম উল্লেখ করা কিংবা তাদের নাম পাঠ করা জরুরি নয়। বরং আল্লাহর নাম নিয়ে জবাই করলেই হলো। এতেই এ পশুটি যিনি কুরবানি দেয়ার নিয়ত করেছেন, তার পক্ষ থেকে কুরবানি আদায় হয়ে যাবে।

Comments
  1. সবই তো বুঝলাম কিন্তু কুরবানির নেসাবটা কী?

    1. নেসাব হচ্ছে স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন ভরি আর টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নেসাব হচ্ছে—এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। তবে যদি কারও সোনা-রূপা বা টাকা-পয়সা কোনোটিই পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু যেগুলো আছে তার সবটা মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপার মূল্যের সমান হয়ে যায়, তাহলে তার ওপরও কুরবানি করা ওয়াজিব।
      টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও প্রয়োজন-অতিরিক্ত সকল আসবাবপত্র কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। যাকাতের নেসাবের ক্ষেত্রে কেবল টাকাপয়সা, সোনা-রূপা ও ব্যবসায়িক পণ্যের হিসাব করতে হয়। কিন্তু কুরবানির নেসাবে এগুলোর পাশাপাশি প্রয়োজন অতিরিক্ত স্থাবর-অস্থাবর যাবতীয় সম্পদই হিসাব করতে হবে।
      কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্যে পূর্ণ বছর নেসাবের মালিক থাকা জরুরি নয়। বরং কুরবানির দিনগুলোতে যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকবে, তার ওপরই কুরবানি ওয়াজিব। এমনকি ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্তেও যদি কেউ নেসাবের মালিক হয়, তাহলে তার ওপরও কুরবানি ওয়াজিব হবে।

  2. আকিকার বিষয়ে একটু বুঝিয়ে বলবেল জাঝাকাল্লাহ খাইরন

    1. আকিকার বিষয়ে কী বুঝতে চাচ্ছেন সেটা টু দি পয়েন্টে বললে রিপ্লাই করতে সহজ হয়।

  3. আসসালামুআলাইকুম, কতো পরিমাণ নগদ টাকা থাকলে কুরবানি দেওয়া লাগবে?জানতে পারলে উপকৃত হতাম।

    1. ওয়াআলাইকুমুস সালাম। শুধু নগদ টাকা নয়, বরং নগদ টাকা, স্বর্ণরূপা, ব্যবসায়িক সম্পদ, প্রয়োজন-অতিরিক্ত স্থাবর সম্পত্তি ও ঘরের প্রয়োজনঅতিরিক্ত আসবাবপত্র- সবকিছু মিলিয়ে যদি ৭৫ হাজার টাকার সমমূল্যের হয়, তাহলে কুরবানি ওয়াজিব হবে। আর যদি কারও কাছে শুধুই স্বর্ণ থাকে, উপরোক্ত অন্য কোনো কিছু না থাকে, তাহলে সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ থাকলে তার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ