Post Updated at 27 May, 2024 – 7:50 AM
কুরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। ইসলামের অন্যতম শিআর বা নিদর্শন। এটি একটি বিশেষ ধরনের ইবাদত। কুরবানি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য হাসিলের উদ্দেশ্যে শরিয়তনির্দেশিত পন্থায় শরিয়ত কর্তৃক নির্ধারিত কোনো পশু আল্লাহ তাআলার নামে জবাই করা।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে সকল নবীর শরিয়তেই কুরবানির বিধান ছিল। তবে সব যুগে কুরবানির পদ্ধতি এক রকম ছিল না। আমাদের শরিয়তে যে কুরবানি, তার মূলে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কুরবানি। তাই একে সুন্নতে ইবরাহীমীও বলা হয়। আমরা নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত পশু জবাই করে কুরবানি আদায় করে থাকি।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আদেশ করেছেন এভাবে—
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্যে নামাজ আদায় করো এবং কুরবানি করো। [সূরা কাউসার, আয়াত ২]
আরেক আয়াতে কুরবানির পশুকে ‘শিআর’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে—
وَ الْبُدْنَ جَعَلْنٰهَا لَكُمْ مِّنْ شَعَآىِٕرِ اللهِ لَكُمْ فِیْهَا خَیْرٌ فَاذْكُرُوا اسْمَ اللهِ عَلَیْهَا صَوَآفَّ، فَاِذَا وَجَبَتْ جُنُوْبُهَا فَكُلُوْا مِنْهَا وَ اَطْعِمُوا الْقَانِعَ وَ الْمُعْتَرَّ، كَذٰلِكَ سَخَّرْنٰهَا لَكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُوْنَ.
আমি কুরবানির উট (ও জন্তু)কে তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম ‘শিআর’ (নিদর্শন) বানিয়েছি। তোমাদের জন্যে তাতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং তা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো অবস্থায় তোমরা তার উপর আল্লাহর নাম নাও (অর্থাৎ জবাই করো)। তারপর যখন তা কাত হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, তখন তা থেকে নিজেরাও খাও এবং ধৈর্যশীল অভাবগ্রস্তকেও খাওয়াও, এবং তাকেও, যে নিজ অভাব প্রকাশ করে। এভাবেই আমি এসব পশুকে তোমাদের বশীভূত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। [সূরা হজ, আয়াত ৩৬]
কুরবানি যেমন আমাদেরকে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের নিঃশর্ত আনুগত্য শিক্ষা দেয়, আল্লাহর হুকুমের সামনে নিজের সকল চাহিদা ও ভালোবাসা বিসর্জন দেয়ার শিক্ষা দেয়, তেমনি তা আমাদেরকে তাকওয়ার শিক্ষাও দেয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন :
لَنْ یَّنَالَ اللهَ لُحُوْمُهَا وَ لَا دِمَآؤُهَا وَ لٰكِنْ یَّنَالُهُ التَّقْوٰی مِنْكُمْ كَذٰلِكَ سَخَّرَهَا لَكُمْ لِتُكَبِّرُوا اللهَ عَلٰی مَا هَدٰىكُمْ وَ بَشِّرِ الْمُحْسِنِیْنَ.
আল্লাহর কাছে এসবের (অর্থাৎ কুরবানির পশুর) রক্ত-মাংস কিছুই পৌঁছে না, বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া। এমনিভাবে তিনি সেগুলো (পশুগুলো) তোমাদের জন্যে বশ করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর বড়ত্ব ঘোষণা কর। কারণ, তিনি তোমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। আর তুমি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দাও। [সূরা হজ, আয়াত ৩৭]
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুবই গুরুত্বের সঙ্গে কুরবানির বিধান পালন করতেন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.এর হাদীস—
أَقَامَ رَسُولُ اللهِ صَلّى اللّهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ بِالمَدِينَةِ عَشْرَ سِنِينَ يُضَحِّي كُلّ سَنَةٍ.
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় দশ বছর কাটিয়েছেন। এ দশ বছরের প্রতি বছরই তিনি কুরবানি করেছেন। [জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫০৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ৪৯৫]
কুরবানি আল্লাহ তাআলার নিকট কতটা পছন্দনীয়—এর কিছুটা ধারণা আমরা এ হাদীস থেকে পেতে পারি—হযরত আয়েশা রা.এর বর্ণনা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :
مَا عَمِلَ آدَمِيٌّ مِنْ عَمَلٍ يَوْمَ النَّحْرِ أَحَبَّ إِلَى اللهِ مِنْ إِهْرَاقِ الدَّمِ ، إِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ القِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَشْعَارِهَا وَأَظْلاَفِهَا ، وَأَنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللهِ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ مِنَ الأَرْضِ ، فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا.
ইয়াউমুন নাহর (অর্থাৎ ১০ যিলহজ)-এ বান্দা যত আমল করে, তার মধ্যে আল্লাহ তাআলার কাছে সর্বাধিক পছন্দনীয় হচ্ছে পশু কুরবানি করা। সন্দেহ নেই, তা কিয়ামতের দিন তার শিং, পশম ও খুরসহ উপস্থিত হবে। আর রক্ত মাটিতে পড়ার আগে তা আল্লাহ তাআলার কাছে কবুল হয়ে যায়। তাই তোমরা সন্তুষ্টিচিত্তে কুরবানি করো। [জামে তিরমিযী, হাদীস ১৪৯৩]