Post Updated at 16 Mar, 2024 – 5:50 AM
আলকুরআনুল কারীম কী? এই কুরআন আমাদের কী উপকারে আসবে? একে আমরা ব্যবহার করব কোন কোন ক্ষেত্রে এবং কীভাবে?
কুরআন থেকে উপকৃত হতে হলে এ সকল বিষয় আমাদের ভালোভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। সৌভাগ্যের বিষয় হল, বিভিন্ন স্থানে নানান আয়াতের মধ্য দিয়ে কুরআন নিজের পরিচয় নিজেই তুলে ধরেছে। এ সকল প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। নিচে এমন কিছু আয়াত ও তার তরজমা উল্লেখ করা যাচ্ছে।
কুরআন কী
ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ
অর্থ : এটি এমন কিতাব, যার মধ্যে কোনও সন্দেহ নেই। এটা হিদায়াত মুত্তাকীদের জন্য। [সূরা বাকারা : ২]
রচয়িতা
কুরআন আল্লাহ তা’আলার বাণী। এটা কোনও মানুষের কথা বা রচনা নয়। একটি সংরক্ষিত কিতাবে এই কুরআন পূর্ব থেকেই লিপিবদ্ধ ছিল। অতঃপর ফিরিশতাদের সর্দার হযরত জিবরাঈল আ.এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা এই কিতাব নাযিল করেন সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি। এই ফিরিশতা জিবরাঈল ও নবী মুহাম্মাদ দু’জনই আমানতদার এবং আমানত রক্ষায় শক্তিশালী। তাঁদের প্রতি দায়িত্ব অর্পনের মূল উদ্দেশ্যই ছিল এই যে, তাঁরা তাদের আমানত পৌঁছে দিবে। সর্বোপরি আল্লাহ তা’আলা তো তাঁদের দেখছিলেনই। যদি তাঁরা সামান্য পরিমাণও কমবেশি করতেন তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাদের ধরে ফেলতেন। কাজেই এই কুরআনের সত্যতা ও বিশুদ্ধতার ব্যাপারে কোনও সন্দেহ আরোপ করা যায় না।
إِنَّهُ لَقُرْاٰنٌ كَرِيْمٌ (٧٧) فِيْ كِتَابٍ مَّكْنُوْنٍ (٧٨) لَا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُوْنَ (٧٩) تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ (٨٠)
নিশ্চয়ই এটা অতি সম্মানিত কুরআন, যা এক সুরক্ষিত কিতাবে (পূর্ব থেকেই) লিপিবদ্ধ আছে। একে স্পর্শ করে কেবল তারাই, যারা অত্যন্ত পবিত্র, এটা জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে অল্প অল্প করে অবতীর্ণ। [সূরা ওয়াকেয়া : ৭৭-৮০]
بَلْ هُوَ قُرْاٰنٌ مَّجِيْدٌ (٢١) فِيْ لَوْحٍ مَّحْفُوْظٍ (٢٢)
(তাদের প্রত্যাখ্যানে কুরআনের কোনও ক্ষতি হয় না) বরং এটা অতি সম্মানিত কুরআন; যা লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ। [সূরা বুরূজ : ২১-২২]
إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ (٤٠) وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ قَلِيلًا مَّا تُؤْمِنُوْنَ (٤١) وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ (٤٢) تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ (٤٣) وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيْلِ (٤٤) لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِيْنِ (٤٥) ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِيْنَ (٤٦) فَمَا مِنْكُمْ مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِيْنَ (٤٧)
এটা (অর্থাৎ কুরআন) এক সম্মানিত বার্তা বাহকের বাণী এটা কোনও কবির বাণী নয়, (কিন্তু) তোমরা অল্পই ঈমান আন এবং না কোনও অতীন্দ্রিয়বাদীর বাণী, (কিন্তু) তোমরা অল্পই শিক্ষা গ্রহণ কর। এ বাণী অবতীর্ণ করা হচ্ছে জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে। আর যদি সে (অর্থাৎ রাসূল, কথার কথা) কোনও (মিথ্যা) বাণী রচনা করে আমার প্রতি আরোপ করত, তবে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম, তারপর তার জীবন-ধমনি কেটে দিতাম। তখন তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত না। [সূরাতুল হাক্কা : ৪০-৪৭]
প্রথম আয়াতে উল্লেখিত ‘বার্তাবাহক’ দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারেন হযরত জিবরাঈল ‘আলাইহিস সালাম। অথবা উদ্দেশ্য নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সম্পৃক্ত ঘটনা
হযরত ওমর রাযি. বলেন, ইসলাম গ্রহণের পূর্বে আমি একবার রাতে বের হলাম নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মসজিদে আসার পথে বাধা দিতে। বের হয়ে দেখলাম উনি আমার পূর্বেই মসজিদে পৌঁছে গেছেন। তিনি নামাযে তিলাওয়াত করছিলেন। আমি কুরআন শুনে মুগ্ধ হলাম। মনে মনে বললাম, আল্লাহর কসম এতো এক কবি; কুরাইশদের কথাই ঠিক। তখনই তিনি তিলাওয়াত করলেন, “এটা কোনও কবির বাণী নয়, (কিন্তু) তোমরা অল্পই ঈমান আন।” আমি বিস্মিত হয়ে ভাবলাম তবে এটা কোনও কাহেনের বক্তব্যই হবে। তিনি সঙ্গে সঙ্গে তিলাওয়াত করলেন, “এবং না কোনও অতীন্দ্রিয়বাদীর বাণী, (কিন্তু) তোমরা অল্পই শিক্ষা গ্রহণ কর। এ বাণী অবতীর্ণ করা হচ্ছে জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে।” তখনই ইসলাম আমার হৃদয়ে পুরোপুরি জায়গা করে নিয়েছিল। [মুসনাদে আহমাদ]
إِنَّهُ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ (١٩) ذِيْ قُوَّةٍ عِنْدَ ذِي الْعَرْشِ مَكِيْنٍ (٢٠) مُطَاعٍ ثَمَّ أَمِيْنٍ (٢١) وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُوْنٍ (٢٢) وَلَقَدْ رَاٰهُ بِالْأُفُقِ الْمُبِيْنِ (٢٣) وَمَا هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِيْنٍ (٢٤) وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَيْطَانٍ رَّجِيْمٍ (٢٥) فَأَيْنَ تَذْهَبُوْنَ (٢٦) إِنْ هُوَ إِلَّا ذِكْرٌ لِّلْعَالَمِيْنَ (٢٧) لِمَنْ شَاءَ مِنْكُمْ أَنْ يَّسْتَقِيْمَ (٢٨)
নিশ্চয়ই এটা (অর্থাৎ কুরআন) এক সম্মানিত ফেরেশতার আনীত বাণী, যে শক্তিশালী, আরশের অধিপতির কাছে মর্যাদাসম্পন্ন। যাকে সেখানে মান্য করা হয় এবং যে আমানতদার। (হে মক্কাবাসীগণ!) তোমাদের সঙ্গী (অর্থাৎ হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উন্মাদ নয়। নিশ্চয়ই সে তাকে (অর্থাৎ জিবরাঈলকে) স্পষ্ট দিগন্তে দেখতে পেয়েছে। এবং সে অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে কৃপণ নয়। এবং এটা (অর্থাৎ কুরআন) কোনও বিতাড়িত শয়তানের (রচিত) বাণীও নয়। তা সত্ত্বেও তোমরা কোন দিকে যাচ্ছ? এটা তো জগদ্বাসীদের জন্য উপদেশ, তোমাদের মধ্যে যে সরল পথে থাকতে চায় তার জন্য। [সূরা তাকবীর : ১৯-২৮]
كَلَّا إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ (١١) فَمَنْ شَاءَ ذَكَرَهُ (١٢) فِي صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ (١٣) مَرْفُوعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ (١٤) بِأَيْدِيْ سَفَرَةٍ (١٥) كِرَامٍ بَرَرَةٍ (١٦)
কিছুতেই এরূপ উচিত নয়। এ কুরআন তো এক উপদেশবাণী। যার ইচ্ছা সে একে স্মরণ রাখবে। এটা লিপিবদ্ধ আছে এমন সহীফাসমূহে, যা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ উচ্চ স্তরের, পবিত্র। এমন লিপিকরদের হাতে লিপিবদ্ধ, যারা অতি মর্যাদাসম্পন্ন, পুণ্যবান। [সূরা আবাসা : ১১-১৬]
কাদের জন্য
هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। [সূরা বাকারা : ১৮৫]
هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ (٢)
এটা হিদায়াত মুত্তাকীদের জন্য। [সূরা বাকারা : ২]
পৃথিবীতে নতুন নয়
মহান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি কিতাব নাযিল করা- এটা কোনও অভূতপূর্ব ঘটনা নয়। পৃথিবীর শুরু থেকেই তা চলমান। বরং মানুষ যখন জান্নাত ছেড়ে পৃথিবীতে নেমে আসছিল তখনই তাদেরকে এ বিষয়ে জানান দেওয়া হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْنَا اهْبِطُوْا مِنْهَا جَمِيعًا، فَإِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ مِنِّي هُدًى فَمَنْ تَبِعَ هُدَايَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ (٣٨) وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيَاتِنَا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ (٣٩)
আমি বললাম, এবার তোমরা সকলে এখান থেকে নেমে যাও। অতঃপর আমার নিকট থেকে তোমাদের নিকট যদি কোনও হিদায়াত পৌঁছে, তবে যারা আমার হিদায়াতের অনুসরণ করবে, তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। আর যারা কুফরীতে লিপ্ত হবে এবং আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করবে, তারা জাহান্নামবাসী। তারা সেখানে সর্বদা থাকবে। [সূরা বাকারা : ৩৮-৩৯]
إِنَّا أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ كَمَا أَوْحَيْنَا إِلٰى نُوْحٍ وَّالنَّبِيِّيْنَ مِنْ بَعْدِهِ، وَأَوْحَيْنَا إِلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوْبَ وَالْأَسْبَاطِ وَعِيْسٰى وَأَيُّوْبَ وَيُوْنُسَ وَهَارُوْنَ وَسُلَيْمَانَ وَاٰتَيْنَا دَاوُودَ زَبُوْرًا (١٦٣)
(হে নবী!) আমি তোমার প্রতি ওহী নাযিল করেছি, যেভাবে নাযিল করেছি নূহ ও তার পরবর্তী নবীগণের প্রতি এবং আমি ওহী নাযিল করেছিলাম ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, (তাদের) বংশধরগণ, ঈসা, আইয়ুব, ইউনুস, হারুন ও সুলাইমানের প্রতি। আর দাউদকে দান করেছিলাম যাবূর। [সূরা নিসা : ১৬৩]
পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের সমর্থক ও সংরক্ষক
পৃথিবীতে আসমানী পুস্তক অবতরণের ধারাবাহিকতায় আল কুরআনুল কারীম সর্বশেষ কিতাব। এই কিতাব তার পূর্ববর্তী কিতাবসমূহকে সত্যায়ন করে। এমনকি একটি স্বতন্ত্র কিতাব হওয়া সত্ত্বেও আল কুরআনুল কারীম পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের শিক্ষাদীক্ষার সারাংশ সংরক্ষণ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ
এবং (হে রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আমি তোমার প্রতিও সত্যসম্বলিত কিতাব নাযিল করেছি, তার পূর্বের কিতাবসমূহের সমর্থক ও সংরক্ষকরূপে। [সূরা মায়িদা : ৪৮]
মীমাংসাকারী
মানব সমাজে অনাকঙ্ক্ষিত একটি প্রসঙ্গ হচ্ছে বিরোধ ও সঙ্ঘর্ষ। বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠি ও নানা ধর্মের লোকেরা বহু বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতামত পোষণ করে এবং এগুলোকে কেন্দ্র করে জড়ায় বিতর্কে ও সঙ্ঘর্ষে। তো আল কুরআনুল কারীম যেহেতু সত্য পথের দিশা দেয় তাই তা প্রাচীন নানা বিতর্ক ও ধ্যানধারণা বিষয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরেছে। এবং সত্যমিথ্যার বিভাজন করেছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। [সূরা বাকারা : ১৮৫]
تَبَارَكَ الَّذِيْ نَزَّلَ الْفُرْقَانَ عَلٰى عَبْدِهٖ لِيَكُوْنَ لِلْعَالَمِيْنَ نَذِيْرًا (١)
মহিমময় সেই সত্তা, যিনি নিজ বান্দার প্রতি সত্য ও মিথ্যার মধ্যে মীমাংসাকারী কিতাব নাযিল করেছেন, যাতে তা বিশ্ববাসীর জন্য হয় সতর্ককারী। [সূরা ফুরকান : ১]
إِنَّهُ لَقَوْلٌ فَصْلٌ (١٣)
এটা (অর্থাৎ কুরআন) এক মীমাংসাকারী বাণী। [সূরা ত্বরিক : ১৩]
পরম সত্য বাণী
يَاأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُوْلُ بِالْحَقِّ مِنْ رَّبِّكُمْ فَاٰمِنُوْا خَيْرًا لَّكُمْ
হে মানুষ! এই রাসূল তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছে। সুতরাং তোমরা (তার প্রতি) ঈমান আন। এরই মধ্যে তোমাদের কল্যাণ। [সূরা নিসা : ১৭০]
নূর : আলোকগ্রন্থ
قَدْ جَاءَكُمْ مِّنَ اللَّهِ نُورٌ وَّكِتَابٌ مُّبِيْنٌ (١٥) يَهْدِيْ بِهِ اللَّهُ مَنِ اتَّبَعَ رِضْوَانَهُ سُبُلَ السَّلَامِ وَيُخْرِجُهُمْ مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوْرِ بِإِذْنِهٖ وَيَهْدِيْهِمْ إِلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ (١٦)
আল্লাহর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে এক জ্যোতি এবং এমন এক কিতাব এসেছে, যা (সত্যকে) সুস্পষ্ট করে। যার মাধ্যমে আল্লাহ যারা তাঁর সন্তুষ্টি অনুসন্ধান করে, তাদেরকে শান্তির পথ দেখান এবং নিজ ইচ্ছায় তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর দিকে নিয়ে আসেন এবং তাদেরকে সরল পথের দিশা দেন। [সূরা মায়িদা : ১৫-১৬]
শিফা
কুরআন মানুষের জন্য শিফা বা সুস্থতার কারণ। এর উপদেশ ও দিকনির্দেশনায় মস্তিকের ভ্রান্তি এবং অন্তরের ব্যাধি দূর হয়ে যায়। এমনকি এই কুরআনের কোনও কোনও আয়াত ও সূরা পড়ে দম করলে মানুষের শারীরিক ব্যাধিও দূর হয়। যেমন সূরা ফাতিহা। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এই সূরার আরেক নাম শাফিয়া বা রোগমুক্তকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
يَاأَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُمْ مَّوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُوْرِ وَهُدًى وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ (٥٧)
হে মানুষ! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এসেছে এক উপদেশ, অন্তরের রোগ-ব্যাধির উপশম এবং মুমিনদের পক্ষে হিদায়াত ও রহমত। [সূরা ইউনুস : ৫৭]
وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْاٰنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَّرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِيْنَ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِيْنَ إِلَّا خَسَارًا (٨٢)
আমি নাযিল করছি এমন কুরআন, যা মুমিনদের পক্ষে শেফা ও রহমত। তবে জালেমদের ক্ষেত্রে এর দ্বারা ক্ষতি ছাড়া অন্য কিছু বৃদ্ধি হয় না। [সূরা বানী ইসরাঈল : ৮২]
বায়্যিনা : হিদায়াতের প্রমাণপঞ্জী
সত্যের দিশারী এই কুরআন সত্যের প্রমান হিসেবেও কাজ করে। সত্যকে সপ্রমান করতে এবং মিথ্যাকে বিতাড়িত করতে এর জুড়ি নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِ
যা মানুষের জন্য (আদ্যোপান্ত) হিদায়াত এবং এমন সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি সম্বলিত, যা সঠিক পথ দেখায় এবং (সত্য ও মিথ্যার মধ্যে) চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়। [সূরা বাকারা : ১৮৫]
হাকীম : হিকমতপূর্ণ ও জ্ঞানগর্ভ কিতাব
কুরআন নিজ পরিচয় দিতে গিয়ে শব্দ ব্যবহার করেছে হাকীম। এই শব্দের অথ হিকমতপূর্ণ বা জ্ঞানগর্ভ; এ শব্দের অর্থ ‘বিজ্ঞানময়’ নয়। অনেকে এই ভুল তরজমা করে থাকে। কুরআন বিজ্ঞানের কিতাব নয়। হ্যা, বিশ্বজগতের স্রষ্টা ও নিয়ন্তার বাণীতে বিশ্বজগতের নানা রহস্য প্রসঙ্গক্রমে উদ্ভাসিত হতে পারে। নানা বিষয় আলোচিত হতে পারে আমাদের শিক্ষাগ্রহণের জন্য। তাই বলে এই কিতাবের মূল লক্ষ বিজ্ঞান শেখানো নয়। সে দৃষ্টিতে এই কিতাব পড়তে যাওয়াও উচিত নয়। বিজ্ঞানের যে টার্ম সেগুলোই বা কুরআনের কোথায় ব্যবহার করা হয়েছে। কাজেই কুরআনকে বিজ্ঞানময় কিতাব বলা উচিত নয়।
الٓرٰ تِلْكَ اٰيَاتُ الْكِتَابِ الْحَكِيْمِ (١)
আলিফ-লাম-রা। এসব হিকমতপূর্ণ কিতাবের আয়াত। [সূরা ইউনুস : ১]
يٰسٓ (١) وَالْقُرْاٰنِ الْحَكِيْمِ (٢) إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِيْنَ (٣)
ইয়া-সীন। হেকমতপূর্ণ কুরআনের শপথ! নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের একজন। [সূরা ইয়াসীন : ১-৩]
ذٰلِكَ نَتْلُوْهُ عَلَيْكَ مِنَ الْاٰيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ (٥٨)
(হে নবী!) এসব এমন আয়াত ও সারগর্ভ উপদেশ, যা আমি তোমাকে পড়ে শোনাচ্ছি। [সূরা আলে ইমরান : ৫৮]
বিধানগ্রন্থ
নব জীবনের জরুরী যাবতীয় বিষয়াসয় সম্পর্কে কুরআনে দিকনির্দেশনা রয়েছে। রয়েছে জরুরী বিধানাবলীও। তবে শরীয়তের এমন কিছু বিধানাবলীও রয়েছে যার উৎস সরাসরী হাদীসের ভা-ার অথবা কুরআনে এর সংক্ষিপ্ত বিবরণ রয়েছে আর বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে হাদীসে। হাদীসের ভা-ারও মানুষের অনুসরণীয় ও পালনীয় বিধানাবিধানের উৎস হবে- এই ঘোষণা দিয়ে কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَمَا اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ (٧)
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা গ্রহণ কর আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক এবং আল¬াহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল¬াহ কঠোর শাস্তিদাতা। [সূরা হাশর : ৭]
উপদেশগ্রন্থ
আল্লাহ তা’আলা এই কুরআনে মানুষকে দু’ভাবে উপদেশাবলী দান করেছেন। প্রথমত মানুষের প্রতি আল্লাহ তা’আলার অপার নে’আমতের কথা স্মরণ করিয়ে এবং এসবের প্রতি চিন্তাভাবনা করার আহ্বান জানিয়ে আল্লাহ তা’আলা উপশে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠির উত্থান পতন ও ঘটনাবলী শুনিয়ে উপদেশ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছেন। কুরআনের পরতে পরতে আমরা এরকম অসংখ্য উপদেশের উপস্থিতি দেখতে পাই। এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনও-
كَلَّا إِنَّهَا تَذْكِرَةٌ (١١) فَمَنْ شَاءَ ذَكَرَهُ (١٢)
এ কুরআন তো এক উপদেশবাণী। যার ইচ্ছা সে একে স্মরণ রাখবে। [সূরা আবাসা : ১১-১২]
কুরআনের এ সকল উপদেশ স্থান পেয়েছে কোথাও দার্শনিক ভঙ্গিতে, কোথাও মূলনীতির বিবরণরূপে, কখনও বা উপমা উপমানে যৌক্তিক বিষয়কে দর্শনীয় সত্যের মাত্রায় নামিয়ে আনা হয়েছে আবার কখনও ঐতিহাসিক প্রমাণ দিয়ে ঈমান গ্রহণে বা জ্ঞানার্জনে বাধ্য করা হয়েছে।
বি. দ্র. অনেকে বলে থাকেন কুরআনে সবকিছু আছে। সকল বিষয়ের পরামর্শ ও সমাধান কুরআনে দেওয়া আছে। এ কথা বলে তারা যে কোনও বিষয় কুরআনে খুঁজতে থাকেন। এটা একটা ভুল। কুরআন নিজের যে পরিচয় দিয়েছে সেটাই সঠিক। এবং সে কাজগুলো করতে গিয়ে যা যা বলা দরকার ছিল কুরআনে তার সবকিছু আছে। তবে কুরআন কোথাও নিজের পরিচয় দেয়নি একথা বলে যে, এতে বিশ^জগতের সব বিষয় বলা আছে। এবং পৃথিবীর যে কোনও ঘটনার ইঙ্গিত বা ভূত ভবিষ্যতের যে কোনও বিবরণ কোরআনে খুঁজতে কিন্তু কুরআন বলেনি। কুরআনকে বিজ্ঞান, ইতিহাস বা দর্শনের পুস্তক নয়। কেউ কুরআনকে এভাবে ব্যবহার করতে চাইলে তা ভুল হবে। কুরআন হিদায়াত লাভের কিতাব। হিদায়াত অর্জনেই একে পাঠ করতে হবে।
ফয়সাল
August 13, 2024 at 7:46 pmমাশাআল্লাহ