Post Updated at 29 Feb, 2024 – 10:08 PM
ওজু ভঙ্গের কারণসমূহ (সংক্ষিপ্ত)
- প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা দিয়ে কোনো কিছু বের হওয়া।
- শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত পুঁজ বা পানি বেরিয়ে গড়িয়ে পড়া।
- মুখ ভরে বমি করা।
- থুথুর সঙ্গে রক্ত বের হলে তা থুথুর সমান বা বেশি হওয়া।
- চিৎ-কাত হয়ে কিংবা কিছুতে হেলান দিয়ে ঘুমানো।
- বেহুঁশ, পাগল বা মাতাল হয়ে যাওয়া।
- নামাজে শব্দ করে হাসা।
ওজু ভঙ্গ সম্পর্কিত কয়েকটি মাসআলা
ক্ষতস্থান থেকে রক্ত-পুঁজ বের হলে
মাসআলা : কোনো ক্ষতস্থান থেকে যদি রক্ত-পুঁজ ইত্যাদি বের হয়ে গড়িয়ে না পড়ে (অর্থাৎ ক্ষতস্থান অতিক্রম না করে), তাহলে এতে ওজু ভাঙবে না। ক্ষতস্থান থেকে গড়িয়ে পড়লে ওজু ভাঙবে। যদি অল্প অল্প করে বের হয় আর সঙ্গে সঙ্গে কেউ তা মুছে ফেলে, তাহলে দেখতে হবে, যদি মুছে ফেলা না হতো, তাহলে গড়িয়ে পড়ত কি না। যদি গড়িয়ে পড়ার পরিমাণ হয় তাহলে ওজু ভেঙে যাবে। আর যদি গড়িয়ে পড়ার পরিমাণ না হয় তাহলে ওজু ভাঙবে না। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/১১]
মাসআলা : একাধিক ক্ষতস্থান থেকে যদি এগুলো বের হয় তাহলে প্রত্যেক ক্ষতস্থানের রক্ত-পুঁজ ভিন্ন ভিন্ন হিসাব করতে হবে। সবগুলো একসঙ্গে মিলিয়ে দেখার প্রয়োজন নেই।
সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করলে
মাসআলা : যদি রক্তপরীক্ষা করার জন্যে কিংবা অন্য কোনো প্রয়োজনে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করা হয় তাহলে ওজু ভেঙ্গে যাবে। [আদদুররুল মুখতার ১/১৩৫; মাসিক আলকাউসার, সেপ্টেম্বর ২০০৫ (৩৬৭)]
ইঞ্জেকশন পুশ করলে
মাসআলা : স্বাভাবিক কোনো ইঞ্জেকশন পুশ করলেও সামান্য রক্ত বের হয়। তবে এর পরিমাণ খুবই কম হলে তাতে ওজু ভাঙবে না। আর যদি এতটুকু রক্ত বের হয়, যা মুছে না ফেললে গড়িয়ে পড়ত, তাহলে ওজু ভেঙ্গে যাবে।
মশা কিংবা জোঁক যদি রক্ত খায়
মাসআলা : মশা বা এ জাতীয় ছোট কিছু যে রক্ত খায় তাতে ওজু ভাঙবে না। তবে জোঁক বা এ জাতীয় বড় কিছু যদি বেশি পরিমাণে রক্ত চুষে নেয়, যা গড়িয়ে পড়ার মতো, তবে ওজু ভেঙে যাবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/১০]
মুখ ভরে বমি করার অর্থ
মাসআলা : মুখ ভরে বমি করার অর্থ হলো, বমির পরিমাণ এত বেশি হওয়া, যা মুখে আটকে রাখা কষ্টকর। এভাবে মুখ ভরে বমি করলে ওজু ভেঙ্গে যায়। বমি যদি মুখ ভরে না হয় তাহলে ওজু ভাঙ্গে না। একবার বমির উদ্রেক হওয়ার পর যদি থেমে থেমে অল্প অল্প করে বমি হয়, তাহলে দেখতে হবে, যতটুকু বমি হয়েছে তা যদি একসঙ্গে হতো তাহলে তা মুখ ভরে হতো কি না। যদি মুখ ভরে হওয়ার মতো হয় তাহলে ওজু ভেঙ্গে যাবে, অন্যথায় ভাঙবে না। আর যদি একাধিকবার বমির উদ্রেক হয়, তাহলে প্রতিবারের বমি ভিন্ন ভিন্ন হিসাব হবে। মুখ ভরে হলে কিংবা এ পরিমাণ হলে ওজু ভাঙবে, অন্যথায় ভাঙবে না। [রদ্দুল মুহতার, ১/২৬৫, ২৬৯]
থুথুর সঙ্গে রক্ত বের হলে
মাসআলা : থুথুর সঙ্গে রক্ত বের হয়ে তা থুথুর সমান বা বেশি হলে ওজু ভেঙ্গে যাবে। এ পরিমাণ রক্ত বের হলে থুথু টকটকে লাল কিংবা লালচে রং ধারণ করে। আর এর কম হলে থুথু হলদে বা প্রায় সাদা অবস্থায় থাকবে; এতে ওজু ভাঙবে না। [মাসিক আলকাউসার, জানুয়ারি ২০১২, প্রশ্ন নং ২৩৭৩]
আপেল ইত্যাদি খাওয়ার সময় খাবারে যদি রক্ত দেখা যায়
মাসআলা : অনেক সময় আপেল পেয়ারা ইত্যাদি ফল কামড়ে খাওয়ার সময় খাবারে সামান্য রক্তের দাগ দেখা যেতে পারে। এ রক্তের পরিমাণ যেহেতু খুবই সামান্য, তাই এতে ওজু ভাঙবে না। [মুছান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, ২/৯৩; শারহুল মুনয়া, ১৩২]
হেলান দিয়ে ঘুমালে কিংবা বাস-ট্রেনের সিটে বসে ঘুমালে
মাসআলা : শুয়ে ঘুমালে ওজু ভেঙে যায়, তা যত সামান্যই হোক। হেলান না দিয়ে কেউ যদি সোজা বসে বসে কিংবা দাঁড়ানো অবস্থায় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে বা ঘুমায়, তাহলে ওজু ভাঙ্গবে না। আর হেলান দিয়ে বসেও কেউ যদি ঘুমায় এবং আসনের সঙ্গে এমনভাবে এঁটে বসে থাকে যে, সামান্য সময়ের জন্যেও কোমরের নিচের অংশ উঠে যায় নি, তবে এভাবে ঘুমানোর কারণে ওজু ভাঙবে না। কিন্তু যদি ঘুমন্ত অবস্থায় সামান্য সময়ের জন্যেও কোমরের নিচের অংশ আসন থেকে পৃথক হয়ে যায়, তবে ওজু ভেঙ্গে যাবে। বাসে-ট্রেনের সিটে বসে ঘুমালে ওজু ভাঙবে কিনা—তাও এ নিয়মের আলোকেই বিবেচিত হবে।
মাসআলা : নামাজে দাঁড়ানো রুকু বসা কিংবা সেজদায় কেউ যদি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয় কিংবা ঘুমিয়ে পড়ে আর তার অঙ্গগুলো স্বাভাবিক জায়গায় থাকে, তাহলে ওজু ভাঙ্গবে না।
[সূত্র : রদ্দুল মুহতার, ১/২৭১]
বেহুঁশ পাগল বা মাতাল হলে
মাসআলা : কেউ যদি অল্প সময়ের জন্যেও বেহুঁশ বা পাগল হয়ে যায়, এরপর আবার সুস্থ হয়ে যায়, তবুও তার ওজু ভেঙে যাবে। এ ক্ষেত্রে কম-বেশির কোনো পার্থক্য নেই।
মাসআলা : কেউ যদি নেশাজাত কোনো কিছু খেয়ে মাতাল হয়ে পড়ে, তবে তার ওজু ভেঙ্গে যাবে। ঐ ব্যক্তিকেই মাতাল বলা হবে, যার অধিকাংশ কথা অসংলগ্ন হয়।
[সূত্র : রদ্দুল মুহতার, ১/২৭৪]
নামাজে শব্দ করে হাসা
মাসআলা : ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নত-নফল যে কোনো নামাজে কেউ যদি শব্দ করে হাসে, তবে তার ওজু ভেঙ্গে যাবে। আর ওজু ভেঙ্গে গেলে তো নামাজও ভেঙ্গে যাবে। জানাযার নামাজের বিষয়টি কেবল ব্যতিক্রম। যে হাসির আওয়াজ পাশে দাঁড়ানো কেউ শুনতে পায় সেটাই শব্দ করে হাসা। আর মুচকি হাসি কিংবা যে হাসিতে এমন শব্দ হয় না, সে হাসিতে ওজু ভাঙবে না, নামাজও ভাঙবে না। [আদদুররুল মুখতার ও রদ্দুল মুহতার, ১/২৭৫]
ওজু ভাঙ্গে না এমন কয়েকটি কাজ
ওজু ভঙ্গের কারণগুলো উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। এ কারণগুলো পাওয়া গেলে ওজু ভঙ্গ হয়। কিন্তু আমাদের সমাজে এমন অনেক কাজকে ওজু ভঙ্গের কারণ মনে করা হয়, যেগুলোর কারণে আসলে ওজু ভঙ্গ হয় না। এমন কিছু কারণ নিচে তুলে ধরা হলো।
সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে
মাসআলা : সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ালে কিংবা স্তন থেকে দুধ বের করলে ওজু ভাঙে না।
হাত-পায়ের নখ বা চুল কাটলে
মাসআলা : নখ-চুল কাটাও ওজু ভঙ্গের কোনো কারণ নয়। তাই ওজু করার পর হাত-পায়ের নখ কাটা কিংবা চুল-গোফ কাটতে কোনো অসুবিধে নেই।
লজ্জাস্থান স্পর্শ করা, দেখা কিংবা সতর খুলে গেলে
মাসআলা : লজ্জাস্থানের দিকে তাকালে অথবা সতরের পুরোটা বা আংশিক খুলে গেলে ওজু ভাঙে না। সমাজে প্রচলিত আছে হাঁটুর উপর কাপড় উঠলে ওজু ভঙ্ হয়। এটি সঠিক নয়। কারো সামনে হাঁটুর উপর কাপড় উঠালে কঠিন গুনাহ। কিন্তু এতে ওজু নষ্ট হবে না। একইভাবে যদি লজ্জাস্থান স্পর্শ করে তবুও ওজু ভাঙ্গবে না। তবে হাত ধুয়ে নেয়া ভালো। [রদ্দুল মুহতার, ১/২৭৮]
ধুমপান করলে
মাসআলা : ধুমপান করা একটি গোনাহের কাজ। কিন্তু এ কারণে ওজু ভাঙে না। গুনাহের কাজ হলেই কোনো বিষয়কে ওজু ভঙ্গের কারণ বলা যাবে না। যেমন মিথ্যা বলা কবিরা গুনাহ। তবে এর দ্বারা ওজু ভাঙে না। হ্যাঁ, ধুমপানের পর নতুন করে ওজু করে নেয়া ভালো।
শরীরের চামড়া কাটলে, উঠিয়ে ফেললে কিংবা উপড়িয়ে ফেললে
মাসআলা : হাত-পা বা শরীরের অন্য কোনো জায়গার চামড়া কেটে গেলে, উঠিয়ে ফেললে কিংবা উপড়িয়ে ফেললে যদি রক্ত বের না হয়, কিংবা বের হলেও তা ক্ষতস্থান থেকে গড়িয়ে না পড়ে তবে ওজু ভাঙবে না। আর রক্ত বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে ওজু ভেঙ্গে যাবে।
নাক থেকে জমাট রক্ত বের হলে
মাসআলা : অনেক সময় সর্দির কারণে নাক থেকে জমাট রক্ত বের হয়। জমাট রক্ত বের হলে ওজু ভাঙবে না। [রদ্দুল মুহতার, ১/২৬৮]