Post Updated at 27 May, 2024 – 7:53 AM

কুরবানি একটি ইবাদত। সুতরাং অন্য কারও জন্যে ঈসালে সওয়াবের নিয়তেও এক বা একাধিক কুরবানি করা যেতে পারে। এমনকি কেউ চাইলে নিজের ওয়াজিব কুরবানি আদায়ের ক্ষেত্রেও অন্য কাউকে ঈসালে সওয়াবের নিয়ত করতে পারেন। এতে নিজের ওয়াজিবও আদায় হবে, অন্যের জন্যে ঈসালে সওয়াবও হবে। [ই‘লাউস সুনান, ১৭/২০৯]

এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  কুরবানি দিয়ে বলেছেন, هَذَا عَنِّى وَعَمَّنْ لَمْ يُضَحِّ مِنْ أُمَّتِي অর্থাৎ এটি আমার পক্ষ থেকে এবং আমার উম্মতের মধ্য থেকে যারা কুরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৮১০]

 

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় হাদীসবিশারদগণ বলেছেন, এ কুরবানি ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে,  ওয়াজিব আদায়ের উদ্দেশ্যে নয়। অর্থাৎ যারা কুরবানি দেয়নি, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুরবানির মধ্য দিয়ে তাদের ওয়াজিব আদায় হবে না, তবে তারা কুরবানির সওয়াব পেয়ে যাবে। এটাই ঈসালে সওয়াব।

মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি

মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও কুরবানি করা যায়। এটা মূলত ঈসালে সওয়াব। এক বা একাধিক মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে এ কুরবানি করা যাবে। এ কুরবানি নফল এবং এ কুরবানির গোশত নিজের স্বাভাবিক কুরবানির গোশতের মতোই খাওয়া যাবে। ওয়ারিশ বা অন্য কেউ (নিজের টাকায়) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে এ কুরবানি আদায় করতে পারেন।

অবশ্য মৃত ব্যক্তি যদি কুরবানির ওসিয়ত করে যান, এবং তার টাকা দিয়েই কুরবানি করা হয়, তাহলে এ কুরবানির গোশত নিজেরা খেতে পারবে না।অন্য গরীবদের সদকা করে দিতে হবে।

জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কুরবানি

ঈসালে সওয়াবের জন্যে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে যেমন নফল কুরবানি করা যায়, তেমনি জীবিত কারও পক্ষ  থেকেও নফল কুরবানি করা যাবে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এমন কুরবানি করেছেন, যেমনটি উপরোক্ত হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ কুরবানির গোশতও নিজের কুরবানির গোশতের মতোই খেতে পারবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানি

সামর্থ্য থাকলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানি করা উত্তম। হযরত আলী রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্যে একটি কুরবানি দিতেন। বর্ণনাকারী হানাশ বলেন :

رَأَيْتُ عَلِيًّا يُضَحِّي بِكَبْشَيْنِ فَقُلْتُ لَهُ : مَا هَذَا ؟ فَقَالَ : إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَوْصَانِي أَنْ أُضَحِّيَ عَنْهُ فَأَنَا أُضَحِّي عَنْهُ.

আমি আলীকে দেখেছি, তিনি দুটি মেষ কুরবানি করেছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম : এটা কেন? (অর্থাৎ আপনি দুটি পশু কুরবানি কেন করলেন?) তিনি উত্তরে বললেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আদেশ করেছেন, আমি যেন তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানি করি। তাই আমি তাঁর পক্ষ থেকে কুরবানি করছি। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৯০]

এ কুরবানির গোশতও নিজের কুরবানির গোশতের মতোই খাওয়া যাবে।

অন্য কারও ওয়াজিব কুরবানি

জীবিত কিংবা মৃত কারও পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যদি কেউ নফল কুরবানি করতে চায়, তবে এ ক্ষেত্রে অনুমতি লাগে না। কিন্তু যদি জীবিত কারও ওয়াজিব কুরবানি কেউ আদায় করতে চায়, তবে অবশ্যই যার কুরবানি আদায় করতে চাচ্ছে, সে ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া তার ওয়াজিব কুরবানি আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী যদি স্ত্রী পক্ষ থেকে কিংবা বাবা সন্তানের পক্ষ থেকে অনুমতি ছাড়াই ওয়াজিব কুরবানি আদায় করেন, তাহলে প্রচলনের কারণে এতে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে।তবে এক্ষেত্রেও তাকে জানিয়ে নেয়া ভালো।

Comments
  1. আসসালামু আলাইকুম। আমি একটি গরুতে ছয় নাম দিয়েছি। একটি মাত্র ভাগ বাকী। আমার প্রশ্ন হলো এইভাগে কি আমি আমার মরহুম মা,বাবা,দুই বোনের নামে সওয়াব রেছানির উদ্দেশ্যে কোরবানি করতে পারব?এটার নিয়ত কিভাবে করবো?অনেকে বলে এক ভাগে এক নামের বেশি দেওয়া যাবেনা তা জীবিত বা মৃত হউক। একাধিক নামদিলে সাত নামের বেশী হয়ে যায়। এক্ষেত্রে মাস’আলা কি?

    1. ওয়াআলাইকুমুস সালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
      একাধিক ব্যক্তির পক্ষ থেকেও ঈসালে সওয়াবের জন্যে কুরবানি করা যাবে। কুরবানি তো এখানে আপনিই দিচ্ছেন। অর্থাৎ এর টাকা আপনি দিচ্ছেন এবং এর মালিকও আপনি। তাদের জন্যে শুধু সওয়াব পৌাঁছানো। এতে অসুবিধা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

- আমি মুসলিমস ডে এর কমেন্টের নীতিমালার সাথে একমত হয়ে পোস্ট করছি

সাম্প্রতিক পোস্ট সমূহ
ক্যাটাগরি সমূহ
ট্যাগ সমূহ
error: অনুগ্রহ করে লেখাটি কপি করবেন না। লিংক শেয়ার করুন। ধন্যবাদ