Post Updated at 29 Feb, 2024 – 10:17 PM
অসুস্থ ব্যক্তি এবং ব্যান্ডেজ, কৃত্রিম অঙ্গ ও কর্তিত অঙ্গের ওজু-গোসল
ব্যান্ডেজের ওপর ওজু-গোসল
মাসআলা : কোনো অঙ্গ যদি ব্যান্ডেজ করা থাকে, তা পুরো অঙ্গেই থাকুক কিংবা আংশিক, প্রথমত দেখতে হবে, ওজুর সময় সে ব্যান্ডেজ খোলা যায় কিনা। যদি খুলে পানিতে ধুয়ে নিলে কোনো সমস্যা না হয় তাহলে তা খুলে ওজু করতে হবে। খোলা গেলেও যদি ক্ষতস্থানটি পানিতে ভেজানো না যায়, তাহলে সরাসরি ক্ষতস্থানে মাসেহ করতে হবে। আর যদি সহজে খোলা না যায়, কিংবা খোলা গেলেও ক্ষতস্থানে মাসেহ করা সম্ভব না হয় তাহলে ব্যান্ডেজের উপরেই মাসেহ করবে। ব্যান্ডেজের বাইরের অংশ যথাসম্ভব ধুয়ে নিতে হবে। বাইরের যে অংশটুকু ধুতে গেলে ব্যান্ডেজ ভিজে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সে অংশটুকুও মাসেহ করা যাবে।
অতএব আঙ্গুল খোলা রেখে যদি অবশিষ্ট পুরো পা প্লাস্টার করা থাকে, তাহলেও পুরো পায়ের ওপরই মাসেহ করা যাবে। [মাসিক আলকাউসার, ফেব্রুয়ারি ২০১৫, প্রশ্ন নং ৩২৯৩]
মাসআলা : পুরো ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করাই ভালো। যদি অর্ধেকের বেশি অংশে মাসেহ করা হয় তাহলেও জায়েজ হবে। এর চেয়ে কম করলে জায়েজ হবে না। [আলবাহরুর রায়েক ১/১৮৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/২৮২]
মাসআলা : প্লাস্টার বা ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থায় যদি গোসল ফরজ হয় এবং পানি ব্যবহারে অন্য কোনো সমস্যা না থাকে, তাহলে প্লাস্টার করা অংশটুকুতে পলিথিন বা এ জাতীয় কিছু পেচিয়ে বাকি শরীর ধুয়ে নিতে হবে, এরপর পলিথিন খুলে প্লাস্টারের উপর মাসেহ করতে হবে। আর যদি এভাবে গোসল করলে ক্ষতস্থান আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে তবে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে। [প্রাগুক্ত]
মাসআলা : ব্যান্ডেজ লাগানোর সময় ওজু থাকুক কিংবা না থাকুক, সর্বাবস্থায়ই ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করা যাবে।
মাসআলা : ব্যান্ডেজ লাগানো অবস্থায় গোসলের বিধান ওজুর বিধানের মতোই। প্রথমত ব্যান্ডেজ খুলে গোসল করা যায় কিনা দেখতে হবে। তা সম্ভব না হলে সরাসরি ক্ষতস্থানটি মাসেহ করে অবশিষ্ট শরীর ধুয়ে নিতে হবে। আর যদি সরাসরি ক্ষতস্থানে মাসেহ করাও ক্ষতিকর হয় তাহলে ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ করে অবশিষ্ট শরীর পানিতে ধুয়ে নিতে হবে।
মাসআলা : প্রয়োজনে ক্ষতস্থানের সঙ্গে এতটুকু ভালো জায়গাও মাসেহ করা যাবে, যা ধুতে গেলে ক্ষতস্থানের ক্ষতি হতে পারে। তবে ভালো জায়গা ধুয়ে নিলে যদি ক্ষতস্থানের কোনো ক্ষতি না হয় তাহলে ধুয়েই নিতে হবে।
মাসআলা : যদি শরীরের অধিকাংশ জায়গায় পানি ব্যবহার করা ক্ষতিকর হয়, তাহলে গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করবে।
মাসআলা : কারও যদি চোখে অপারেশন হয় এবং এ কারণে চোখে পানি লাগানো ডাক্তারের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ হয়, এ অবস্থায় যেহেতু গোসলের সময় তার মাথা ও চেহারা ধোয়া সম্ভব নয় তাই ঘাড় থেকে নিচের অংশ ধুয়ে উপরের অংশটুকু (অর্থাৎ চেহারা ও কান সহ পুরো মাথা) ভেজা হাতে মাসেহ করে নেবে। আর ওজুর সময় চেহারা মাসেহ করবে এবং অবশিষ্ট ওজু যথানিয়মে আদায় করবে।
মাসআলা : যদি কোনো ক্ষতস্থানে কিংবা ব্যান্ডেজের ওপর ভেজা হাতে মাসেহ করাও ক্ষতিকর হয়, তবে ঐ অংশটুকু মাসেহও করবে না। এভাবেই তার ওজু হয়ে যাবে।
ব্যান্ডেজের উপর মাসেহ কখন ভেঙ্গে যায়
মাসআলা : সুস্থতার পূর্বে যদি ব্যান্ডেজটি খুলে যায় কিংবা কোনো প্রয়োজনে খোলা হয়, তাহলে মাসেহ ভাঙ্গবে না। আবার ব্যান্ডেজটি লাগিয়ে নিলে তাতে নতুন করে মাসেহ করা জরুরি নয়। তবে কেউ যদি নতুন ব্যান্ডেজ লাগানোর পর তাতে পুনরায় মাসেহ করে তাহলে তা উত্তম হবে। আর যদি সুস্থ হওয়ার পর খুলে যায় কিংবা খোলা হয় এবং ব্যান্ডেজটি আবার বাঁধার প্রয়োজন না থাকে, তাহলে মাসেহ ভেঙ্গে যাবে। তখন ওজু থাকলে শুধু ব্যান্ডেজের জায়গাটি ধুয়ে নিলেই হবে।
সংযোজিত অঙ্গের ওজু-গোসল
মাসআলা : অনেক সময় শরীরে কৃত্রিম অঙ্গ সংযোজন করা হয়। সেটি যদি এমনভাবে লাগানো হয় যা অপারেশন ছাড়া সহজে খোলা যায় না, তাহলে তা মূল অঙ্গের মতোই বিবেচিত হবে। মূল অঙ্গের যে বিধান, এমন কৃত্রিম অঙ্গেরও একই বিধান। আর যদি কৃত্রিম অঙ্গটি সহজেই খুলে রাখা যায়, তাহলে ওজু-গোসলের সময় তা খুলেই নিতে হবে।
কর্তিত অঙ্গের পবিত্রতা
মাসআলা : কোনো কারণে যদি কারও হাতের কনুইসহ কিংবা পায়ের টাখনুসহ অপারেশন করে কেটে ফেলা হয় তাহলে তো ওজু-গোসলের সময় তা আর ধোয়ার সুযোগই থাকল না। অবশিষ্ট অঙ্গগুলো ধুয়ে নিলেই হবে। আর যদি উক্ত অঙ্গগুলোর কিছু অংশ বাকি থাকে, যেমন কারও এক-দুটি আঙ্গুল কেটে ফেলা হলো, তাহলে তাকে ঐ হাতের বা পায়ের যতটুকু বাকি আছে ততটুকুই নিয়মমতো ধুয়ে নিতে হবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/৫]
প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলে
মাসআলা : কোনো অঙ্গ যদি এমনভাবে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়, যা কেটে ফেললেও সে টের পাবে না, তবুও ওজু-গোসলের সময় সে অঙ্গটি ধুয়ে নিতে হবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/৫]
হাত-পা ফেটে গেলে
মাসআলা : কারও যদি হাত-পা ফেটে যায়, বিশেষত শীতের সময়, এবং ফাটলের ভেতর পানি পৌঁছানো খুব বেশি কষ্টকর হয়, কিংবা পানি পৌঁছালে বাস্তবেই রোগ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে, তবে সেখানে পানি ঢেলে ধুয়ে নিলেই হবে, পানি ভেতরে পৌঁছাতে হবে না। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে ঐ জায়গার উপর ভেজা হাত দিয়ে মুছে নিলেই হবে। [ফাতাওয়া আলমগীরী, ১/৫]
ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহের রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির করণীয়
মাসআলা : কেউ যদি সন্দেহের রোগে আক্রান্ত হয় এবং এ জন্যে ওজু করার পরও বারবার সন্দেহ হয়—ঠিকমতো ওজু করা হলো কিনা কিংবা অমুক অঙ্গটি ধোয়া হয়েছে কিনা ইত্যাদি, তবে তার করণীয় হলো, প্রথমে পূর্ণ মনোযোগের সঙ্গে ওজু করবে। এরপর যতই সন্দেহ হোক, সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ করবে না এবং নতুন করে কোনো অঙ্গ ধুইবে না। এভাবে কিছুদিন করলে ইনশাআল্লাহ এ সমস্যা কেটে যাবে। আর এ ধরনের ব্যক্তি কোনো বিজ্ঞ আলেমের শরণাপন্ন হয়ে তাকে নিজের অবস্থা জানাবে। [খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/১৮; আলমুহীতুল বুরহানী ১/২১৭; আদ্দুররুল মুখতার ১/১৫০]